শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে

দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে ৯ বিষয়ে ঐকমত্য

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ  সম্মেলনে ৯ বিষয়ে ঐকমত্য

দিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধানরা জেআরডি স্বাক্ষর শেষে দলিল বিনিময় করেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি গার্ড (বিএসএফ) সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে যৌথ পদক্ষেপ নেবে। নয়াদিল্লিতে ৫ দিন ধরে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ ৪৭তম অর্ধবার্ষিক সীমান্ত সমন্বয় সম্মেলনে এ বিষয়ে সহমত হয়েছে। এই সম্মেলনে ৯টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। সম্মেলন শেষে গতকাল দিল্লিতে বিএসএফের চাওলা ক্যাম্পে দুই সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রধান আলোচনার নির্যাসে (জয়েন্ট রেকর্ড অব ডিসকাশন-জেআরডি) যৌথ স্বাক্ষর করেন। বিজিবির নেতৃত্ব দেন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম এবং বিএসএফের নেতৃত্ব দেন মহাপরিচালক কে কে শর্মা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। এই যৌথ আলোচনা পত্রে লিখিত বিবরণগুলো সংবাদমাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। এতেই এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পরে বিজিবি প্রধান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা এই আলোচনায় সন্তুষ্ট।

সম্মেলনে বিজিবি প্রধান সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই হত্যা অযথা দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে যে সুসম্পর্ক রয়েছে তাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। জবাবে বিএসএফ প্রধান শর্মা বলেন, বিএসএফ বর্তমানে অত্যন্ত প্রয়োজন ব্যতীত মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে না। ভবিষ্যতেও করবে না। এমনকি সশস্ত্র অপরাধীরা আক্রমণ করলেও বিএসএফ সংযত ব্যবহার করছে। আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় আন্তর্জাতিক সীমান্তে অপরাধীদের যাতায়াত বন্ধ করার জন্য উভয় পক্ষ যৌথ পদক্ষেপ নেবে এবং ধৃতদের বিরুদ্ধে নিজ নিজ দেশের আইন অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে বাংলাদেশ বিজিবি প্রধান সীমান্তে হত্যা আগের থেকে কম হওয়ার জন্য বিএসএফের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

এও সিদ্ধান্ত হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত অতিক্রম করলে তাদের গ্রেফতার করে একে অপরের সীমান্ত রক্ষীদের হাতে তুলে দেবে। এক্ষেত্রে গুলি করা হবে না।

বাংলাদেশে এযাবতকাল আশ্রিত উত্তর-পূর্ব ভারতের উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফ বাংলাদেশ সরকারের এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের প্রশংসা করে। তবে এখনো কিছু মণিপুরের উগ্রবাদী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে তারা জানান। বিজিবি প্রধান সাফ জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নীতি হলো বাংলাদেশের জমি থেকে ভারতবিরোধী কাজ করতে দেওয়া হবে না। এখন পর্যন্ত কোনো নতুন উগ্রবাদীদের সন্ধান বাংলাদেশে পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানিয়ে দেন।

উভয় পক্ষ সহমত হয়েছে যে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হবে। ভারতের নিরাপত্তা রক্ষীদের আশঙ্কা, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে। তাদের গ্রেফতার করে ফের সীমান্ত রক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। মানব পাচারে যারা শিকার হন তাদের দ্রুত উদ্ধার করে যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। বিজিবি প্রধান ভারত থেকে মাদকদ্রব্য এবং ফেনসিডিল পাচার রোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে দাবি জানান। তেমনি বিএসএফ প্রধান জাল নোট পাচার রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানান। তবে বিএসএফ প্রধান স্বীকার করেন, আগের তুলনায় জাল নোট পাচার বন্ধ হয়েছে। বিজিবি প্রধান জানান, সীমান্তে জাল নোট রুখতে মেশিন বসানো হয়েছে। অনেক জাল নোট ধরা পড়ছে। সীমান্তে যেসব উন্নয়নমূলক ও সীমান্ত পোস্ট নির্মাণের যে প্রস্তাব ছিল তাতে উভয় পক্ষ সহমত হয়েছে বলে যৌথ স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে আস্থা বর্ধক ব্যবস্থা হিসেবে সাংস্কৃতিক কার্যকরণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বৈঠক আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর