সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প

এলসি খুলে ৫ হাজার কোটি টাকা কমিশন চায় সোনালী ব্যাংক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সরকারের মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ৯৪ হাজার কোটি টাকার ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে এর ব্যাংক কমিশন দাঁড়ায় ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ সরকার এর বিপরীতে সোনালী ব্যাংককে দুই দফায় সব মিলিয়ে ২০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। সরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণপত্র খোলার স্ট্যান্ডার্ড কমিশন হচ্ছে শতকরা ৪০ পয়সা। এখন রাষ্ট্র মালিকানাধীন দেশের প্রধান এই ব্যাংকটি অনুরোধ করেছে, সরকার যেন তাদের থোক বরাদ্দ দেওয়ার পরিবর্তে স্ট্যান্ডার্ড হারে কমিশন দেয়। গত ৩০ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে বাণিজ্যিক হারে এই কমিশন দেওয়ার অনুরোধ জানান সোনালী ব্যাংকের সিইও এবং এমডি মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। চিঠিতে শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প নয়, ব্যাংকটি সরকারকে অন্যান্য খাতে যেসব সুবিধা দেয় তার সব কিছুতেই যৌক্তিক হারে সেবার মূল্য দাবি করেছে। ব্যাংকটি বলছে, সরকারকে বিভিন্ন খাতে সেবা দিয়ে বছরে তাদের এক হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সাধারণ ক্ষেত্রে আমদানি পণ্যের ঋণপত্রের জন্য প্রতি ত্রৈমাসিকে (৯০ দিন) ৪০ পয়সা কমিশন পায় ব্যাংকটি। এ হিসাবে ৯৪ হাজার কোটি টাকার এলসির জন্য প্রতি ত্রৈমাসিকে সোনালী ব্যাংকের ৩৭৬ কোটি টাকা কমিশন পাওয়ার কথা। ২০২৪ সাল পর্যন্ত চলমান এ প্রকল্পের এলসির জন্য সব মিলিয়ে ৬ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা কমিশন পাওয়ার কথা ব্যাংকটির। এ ছাড়া সরকারের অন্যান্য সেবা বাবদ বছরে আরও এক হাজার কোটি টাকার কমিশন পাওয়ার কথা। চিঠিতে বলা হয়, সোনালী ব্যাংক সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন পর্যায়ের সুবিধাভোগীকে বিনামূল্যে ৩৭টি সেবা ও নামমাত্র মূল্যে ১৪টি সেবা প্রদান করে থাকে। এসব সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংককে বিপুল পরিমাণ ব্যয়ভার বহন করতে হয়। সরকারের পক্ষে পেনশন, সঞ্চয়পত্র ও ওয়েজ আর্নার্স বন্ড নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করে সেবা দিয়ে থাকে সোনালী ব্যাংক। এসব সেবামূল্য পরিশোধের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্য অর্থ পেতে উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রীয় স্বার্থে এবং সরকারি সিদ্ধান্তে অনেক অলাভজনক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। বিপিসি, বিজেএমসি, বিএডিসি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে সংকটকালে ১৪ শতাংশ হারে ঋণ তহবিল দেওয়া হলেও পরবর্তীতে মাত্র ৫ শতাংশ হারে ২০ থেকে ৩০ বছর মেয়াদি বন্ড দিয়ে ওই ঋণ সমন্বয় করে সরকার। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত সেবা ও আগামের বিপরীতে যথাযথ ফি/কমিশন এবং বিনিময় মূল্য না পাওয়ায় সোনালী ব্যাংককে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাৎসরিক এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোনো কমিশন ছাড়াই আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এলসি খুলেছি। বিপুল অর্থের এ এলসির কমিশন পেলে মূলধন ঘাটতি পূরণ করে সোনালী ব্যাংক মুনাফা করতে পারত। তিনি বলেন, বিনা মাসুলে আমরা সরকারকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকি।

 সেইসব সেবা অন্য মাধ্যমে করতে চাইলে জেলায়-উপজেলায় অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করতে হতো সরকারকে। এতে খরচও বাড়ত। অথচ একই সেবা দিয়ে সোনালী ব্যাংক কোনো কমিশন পাচ্ছে না। এখন আমরা সরকারকে যেসব সেবা দিয়ে থাকি সেসবের বিপরীতে যৌক্তিক কমিশন পেলে সোনালী ব্যাংক অচিরেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। তিনি বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারি আমাদের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় এনেছে। তারপরও সোনালী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। গত বছর আমরা ৫শ কোটি টাকার লোকসান কাটিয়ে ১২শ কোটি টাকার মুনাফা করেছি।

সর্বশেষ খবর