শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অবশেষে ডাকসু নির্বাচনের তোড়জোড়

ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে চিঠি, আগামীকাল বৈঠক, ভোটার তালিকার কাজ শুরু

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের চিঠি দিয়ে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের হঠাৎ তোড়জোড় নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিস জানিয়েছে, আগামীকাল বেলা সাড়ে ১১টায় উপাচার্যের কার্যালয় সংলগ্ন অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাস রুমে ওই সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ছাত্র সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো হয়। শিক্ষার্থীদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই নির্বাচন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ডাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এরই অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার হল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। উপাচার্য বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য অনেকগুলো অনুষঙ্গ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। সেটি ১৭-১৮ বছরে আমরা উজ্জীবিত করেছি। ওই আলোকে সভাটি ডাকা হয়েছে। ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিদের পরামর্শ নেওয়া দরকার। ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো এখানে অংশ নেবে।

চিঠিতে বলা হয়, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় শুধু ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সভায় যোগদানের জন্য আমন্ত্রিত। সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। আলোচ্যসূচিতে লেখা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে। সর্বশেষ, ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। সম্প্রতি হাই কোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও ডাকসু নির্বাচন না করায় ভিসি, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এরপরই ছাত্র সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়ে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী  বলেন, ডাকসু নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য আমরা ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়েছি। ইতিমধ্যেই আমরা হলগুলোতে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য কাজ শুরু করেছি। নির্বাচনের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনার জন্যই ছাত্র সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে আলোচনায় বসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন হিসেবে দেখতে চাই। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন একটি অচলায়তন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটি ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাই। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর যে সহাবস্থানের রাজনীতি থমকে আছে সেই অচলাবস্থার অবসান ঘটলে ছাত্রদল অবশ্যই ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেবে।

ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ডাকসু নির্বাচনের আগে হলগুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্ব দূর করে তা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে এনে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি বাদে সব দলমত নির্বিশেষে ক্যাম্পাসে একটা গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি আমরা জানাব। উল্লেখ্য, ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হাই কোর্টের দেওয়া রায় আট মাসেও বাস্তবায়িত হয়নি। নির্বাচনের আয়োজন না করায় এ বিষয়ে আদালতের আদেশ প্রায় দুই মাস ধরে উপেক্ষার শিকার হচ্ছে। উচ্চ আদালতের আদেশকে এভাবে অমান্য করার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সম্প্রতি আদালত অবমাননার অভিযোগে নোটিসও দেওয়া হয়। রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন নেই, এটা দুঃখজনক। এরপর কয়েক বছর একটি রিট চালিয়ে উচ্চ আদালত থেকে যে আদেশ পেলাম, তাকেও কয়েক মাস ধরে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমরা নোটিস দিয়েছি, নির্ধারিত সময়ে জবাব না পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে ১৭ জানুয়ারি হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তার দরকার হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও রায়ে বলা হয়।

সর্বশেষ খবর