শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম মেডিকেলে বিশ্বের প্রথম ‘বোন্স লাইব্রেরি’

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেলে বিশ্বের প্রথম ‘বোন্স লাইব্রেরি’

মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীর প্রথম বর্ষের অ্যানাটমি বিষয়ে লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন হয় ৪০ হাজার টাকা মূল্যের একটি বোন সেট। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর  জন্য এটি বেশ ব্যয়বহুল। কেউ বোন সংগ্রহ করতে পারলেও অর্থের সংকট থাকে, আবার কারও অর্থ থাকলেও নানা কারণে বোন সংগ্রহ করতে পারেন না। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শিক্ষার্থীদের  এখন এ সমস্যা আর থাকছে না। চমেক ছাত্রসংসদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বোন্স লাইব্রেরি (অ্যানাটমি লাইব্রেরি)। ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এটি উদ্বোধন করেন। কলেজের নতুন একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় লাইব্রেরির পাশেই মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের হাড় সংরক্ষণ করে যাত্রা করে এটি। এর নামকরণ করা হয়েছে বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মনসুর খলিলের নামে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল এ উদ্যোগ একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত  বলে মনে করছেন অনেকে। জানা যায়, প্রথম বর্ষের মোট শিক্ষার্থী ২৫০ জন। প্রতি শিক্ষার্থীর প্রয়োজন হয় ৪০ হাজার টাকা মূল্যের একটি বোন সেট। সে হিসেবে প্রতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বছরে এক কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক ধারার এই সময়ে ছাত্রসংসদের বোন্স লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার মতো একটি অতি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি উপকারে আসবে। ছাত্রসংসদের এটি একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ। চমেক ছাত্রসংসদের ভিপি সাব্বির আহমেদ নাহিদ বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের। কলেজে ভর্তির পর প্রথম বর্ষে সম্পূর্ণ নতুন জায়গায় এসে মেডিকেলের দামি বইসহ অতি প্রয়োজনীয় নানা জিনিস কেনার পর আবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা দিয়ে এক সেট বোন্স কেনার মতো সামর্থ্য অনেকেরই থাকে না। সেই চিন্তা থেকে আমরা বোন্স লাইব্রেরি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। এখন শিক্ষার্থীদের বোন ক্রয় করে ক্লাসে যেতে হবে না। কার্ডের মাধ্যমে লাইব্রেরি থেকে বোন সংগ্রহ করে ক্লাস শেষে তা আবার ফেরত দিয়ে বোন ব্যবহার করতে পারবেন তারা। এ উদ্যোগে বিশেষ ভূমিকা রাখেন আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী বড় ভাই মোহাম্মদ আবু তৈয়ব।’

চমেক ছাত্রসংসদ সূত্রে জানা যায়, সবার সহযোগিতায় প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিকভাবে প্রতি সেটে ২০৬টা করে বোন নিয়ে ১৫ সেট বোন্স এবং প্রায় ১৩০টি প্রধান ও মৌলিক গ্রন্থ নিয়ে যাত্রা এ লাইব্রেরির। তবে আগামীতে বোন্স আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা আছে। কারণ কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীসংখ্যা ২৫০ জন। তাই আরও বোন্স লাগবে বলে জানা যায়। এ ছাড়া বোন্স লাইব্রেরির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য চমেক কর্তৃপক্ষ অ্যানাটমি বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে একটি কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, বোন্স লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে মাথা, বুকের পাঁজর, মেরুদণ্ড, হাত, পাসহ মানবদেহের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অস্থি ও হাড়। সন্নিবেশিত আছে এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বৈজ্ঞানিক নাম, হাড়ের শারীরিক অবস্থান, হাড়ের নম্বর, হাড়ের কোন অংশের কী নাম। লাইব্রেরিতে বসে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা হাড় নিয়ে নানামুখী গবেষণা ও জ্ঞানচর্চার সুযোগ পাবেন। পড়াশোনার জন্য লাইব্রেরিতে বোন্স ইস্যুকরণের ব্যবস্থাও রয়েছে।

সর্বশেষ খবর