শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

পাহাড় সেজেছে জুমের সোনালি ধানে

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাহাড় সেজেছে জুমের সোনালি ধানে

সবুজ পাহাড়ের বুকজুড়ে সেজেছে জুমের সোনালি ধান। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে চারদিকে জুমের ফসলের সমারোহ। সোনালি ধানের উল্লাসে হাসছে পাহাড়। সে হাসিতে যেন হাসছে জুমিয়ারা (কৃষকরা)। কারণ পার্বত্যাঞ্চলে এ বছরও জুমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই চোখেমুখে এখন আনন্দের উচ্ছ্বাস। পাহাড়ের জুমখেতে সবে শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটা উৎসব। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ উত্ফুল্ল মনে ব্যস্ত জুমের পাকা ধান কাটতে। একই সঙ্গে ধুম পড়েছে মারফা, বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়স, কাঁকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল তোলার কাজও। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবিকার প্রধান উৎস জুম চাষ। উঁচু পাহাড়ের ঢালে বিশেষ পদ্ধতিতে চাষ করা হয় বলে এটি জুমচাষ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের মধ্যে শুধু তিন পার্বত্য জেলা— অর্থাৎ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ এ চাষাবাদ করে থাকে। জুম চাষিরা বছর শেষে অর্থাৎ পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে গাছপালা- বন-জঙ্গল কেটে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। গাছগাছালি পরিষ্কার করার পর জুম চাষে উপযোগী করে তোলা হয় স্থানটি। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, মারফা, মিষ্টিকুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রকম বীজ বপন করে থাকে। আর এসব জুমের ধান আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেই পেকে থাকে। তারপর শুরু হয় জুমের ফসল তোলার কাজ। সে সময় মারফা, কাঁচামরিচ, চিনার পাওয়া যায়। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে তোলা হবে তুলা, তিল ও যব। তবে একটি স্থানে একবার জুম চাষ করা হয়। পরের বছর জুম চাষ করার জন্য নতুন কোনো পাহাড় খুঁজে নিতে হয় চাষিদের। স্থানীয় জুম চাষি লক্ষ্মীসোনা চাকমা জানান, জুমে বীজ বপনের ৫ মাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের পর ফসল পাওয়া যায়।

কিন্তু পাহাড়ধসের কারণে অনেক ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। তবে যেসব জমি অক্ষত ছিল, সেগুলোতে ফলনও হয়েছে ব্যাপক। রাঙামাটি কৃষি অধিদফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা শান্তিময় চাকমা জানান, পাহাড়ে যারা জুম চাষ করে থাকে তারা যাতে উচ্চ ফলনশীল ধান ও সবজির আবাদ করতে পারে সে বিষয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। এ মৌসুমে উপযুক্ত জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের কারণে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। আশা করি এ বছর খাদ্য সংকট হবে না জুম চাষিদের। এ ব্যাপারে রাঙামাটির জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী পবন কুমার চাকমা  জানান, পাহাড়ধস ও বন উজাড়ের কারণে আগের তুলনায় পার্বত্যাঞ্চলে জুম চাষ কমে এসেছে।

সর্বশেষ খবর