রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকার হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। চলতি বছরে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৪ হাজার জন ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। প্রতিদিনই বাড়ছে হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার আক্রমণ প্রকট হওয়ার কারণ নিয়ে আলোচনা করছেন চিকিৎসকরা। জ্বরের ধরন পাল্টানোকে দায়ী করছেন অনেকে। মশা নিধনে সিটি করপোরেশন ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিলেও কমছে না ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। নামে ক্র্যাম প্রোগ্রাম হলেও সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।

সরকারি হিসাব অনুসারেই গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। গত আগস্টে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬৬৬-এ উঠে যায়। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম নয় দিনে ছাড়িয়ে গেছে সেই হারও।

সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ১১ জনের মধ্যে আটজন মারা গেছে ‘হেমোরেজিক শক’-এর কারণে। ডেঙ্গু রোগের এ পরিস্থিতিতে রক্তক্ষরণ হয়। অনেকের মলের সঙ্গে রক্ত যায়। আট বছরের একটি শিশু জ্বরে ভোগার পরপরই মারা যায়। দুজন মারা গেছে ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে’। এ পরিস্থিতিতে রোগী প্রবল জ্বরে অচেতন হয়ে পড়ে। মৃতদের মধ্যে চারজনের বয়স ছিল ১০ বছরের নিচে। একটি শিশুর বয়স ছিল এক বছর সাত মাস। একজন ছিলেন ২৭ বছর বয়সী চিকিৎসক। এদিকে এবারের ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখে বিশেষজ্ঞরা এ রোগ নিয়ে নতুন করে গবেষণা ও ভাবনাচিন্তার তাগিদ দিয়েছেন। বিশেষ করে চার ধরনের (সেরোটাইপের) ডেঙ্গুর (ডিইএনভি-১, ডিইএনভি-২, ডিইএনভি-৩ ও ডিইএনভি-৪) মধ্যে ঠিক কোন ধরনের প্রকোপ বাংলাদেশে বেশি কিংবা এবার বিশেষ কোনো ধরনের ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কিনা, তা খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ. বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রতিদিনই নতুন ডেঙ্গু রোগী আসছেন। এর মধ্যে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন এ রকম রোগী আছেন। এজন্য এগুলো নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন।’ জ্বর হলে ইচ্ছা অনুযায়ী ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের প্রতিবেদনে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যায় এবারই দেশে সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী; যা গত পাঁচ বছরের যে কোনো বছর এবং যে কোনো মাসের চেয়ে সর্বোচ্চ। এ রোগ পর্যায়ক্রমে বেড়েছে। এর আগে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে, ১ হাজার ৫৪৪ জন, এবার আগস্টেই ওই সংখ্যা ছাড়িয়ে উঠে যায় ১ হাজার ৬৬৬-এ। আর সেপ্টম্বরের প্রথম নয় দিনে ওই হার টপকে আক্রান্তের সংখ্যা তালিকাভুক্ত হয়েছে ৭৬৬। এ হারে পুরো মাস চলতে থাকলে সংখ্যা ২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, এ বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ৯৯৫ জন। শুক্রবার পর্যন্ত্ম ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৬৭ জন। স্যার সলিমুলস্নাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৩৯ জন, সোহরাওয়ার্দীতে ১৫৭ জন, হলি ফ্যামিলিতে ২৪৬ জন, বারডেম হাসপাতালে ১৮৭ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৬৬৪ জন, পপুলার মেডিকেলে ১৫৮ জনসহ বাকিরা বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। মশক নিধনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করেছে। মশক নিধনে এ বছর দুই সিটি করপোরেশনের মোট বরাদ্দ ছিল ৪৬ দশমিক ৫ কোটি টাকা। টাকা খরচ হলেও আয়ত্তে আসছে না ডেঙ্গু। এজন্য নগরবাসীকে সচেতন হওয়ান আহ্বান জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর