রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

গ্রামকে শহর হিসেবে গড়তে কাজ করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার জন্য ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কী পেলাম, না পেলাম সেই চিন্তা না করে আগে দেশকে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের আগামী দিনের প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবন পায়; সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। গতকাল গণভবনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের (আইডিইবি) ২২তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক বছর নষ্ট হয়ে গেছে। পঁচাত্তর থেকে ১৯৯৬ সাল; ২১ বছর হারিয়ে গেছে। এই ২১ বছর প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। উন্নতি হয়েছে ক্ষমতাসীন যারা ছিল তাদের, মুষ্টিমেয় কিছু গোষ্ঠীর। বৃহৎ জনগোষ্ঠী বঞ্চিত ছিল। এই বঞ্চিত মানুষকে মুক্তি দেওয়াই আমি মনে করি আমার কাজ। আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি, সমাজসেবা, কারিগরি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য আইডিবির সদস্য তিনজন বিশিষ্ট প্রকৌশলীকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি ও সমাজসেবায় পদক পান ১৯৭০ সালে নির্বাচিত এমএনএ মরহুম সফর আলী মিয়া। সাংগঠনের ও কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য আইডিইবির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল কাদের সরকার এবং সংস্কৃতি অঙ্গনে অবদানের জন্য বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক সৈয়দ উদ্দিন আহমেদ ছটকুকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের আইডিইবি সভাপতি এ কে এম এ হামিদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান।

গ্রামগুলোকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট বা স্থাপনা নির্মাণের ফলে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া, নদী ভাঙনের ফলেও বিপুল পরিমাণ জমি এবং স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যায়। তাই এখনই আমাদের এ বিষয়ে জরুরি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিকল্পিত নগরীর পাশাপাশি গ্রামগুলোকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে গ্রামাঞ্চলে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নিয়েছি। গ্রামে বসবাস করেই যাতে শহরের সব সুবিধা পাওয়া যায় সে ব্যবস্থা আমরা করছি। তাহলে মানুষের শহরে বসবাসের প্রবণতা কমবে।

দক্ষ মানবসম্পদের চেয়ে কোনো সম্পদই বড় নয় : দক্ষ মানবসম্পদের চেয়ে কোনো সম্পদই বড় নয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটাই বিশ্বাস করি। এ জন্য আমরা জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। গত সাড়ে ৯ বছরে দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৫০০ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইউনিভার্সিটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনলাইনে ভর্তি পদ্ধতির পাশাপাশি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে ডাবল শিফট চালু করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের বিশেষ দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বিশ্বব্যবস্থায় টেকনোলজিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চাহিদাসম্পন্ন। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে একমুখী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাধর্মী একটি প্রযুক্তি ও দক্ষতাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকৌশলীদের চাকরিতে যোগদানের সময়সহ তিনটি স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার দাবির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

সম্মেলন উদ্বোধন করতে সকাল ১০টার কিছু পরই অনুষ্ঠানস্থলে যান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানায় আইডিইবির তৈরি ‘মি. টিভেট’ নামের একটি রোবট। রোবটটির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথাও বলেন। সকাল সোয়া ১১টার দিকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বমানের ‘টেকনিক্যাল ভোকেশনাল এডুকেশন ট্রেইনিং’ শীর্ষক এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে দুটি আন্তর্জাতিক সেমিনারসহ ১৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিশ্বের সাতটি দেশের ১৫ বিদেশিসহ ছয় হাজারেরও বেশি আমন্ত্রিত অতিথি ও সদস্য প্রকৌশলী অংশ নিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর