বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রস্তুত হচ্ছে মাদকসেবী পুলিশের তালিকা

মাহবুব মমতাজী

প্রস্তুত হচ্ছে মাদকসেবী পুলিশের তালিকা

এবার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে থাকা মাদকসেবীদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে প্রথমে নিজেদের মাদকমুক্ত করার এই পদক্ষেপ। প্রস্তুত হওয়া তালিকায় থাকা চার শতাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, সরিষার মধ্যে ভূত রেখে মাদক নির্মূল করা যাবে না। এর আগে ১২ জুলাই মাসিক অপরাধ সভায় মাদক অভিযান জোরদারের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের মধ্যে থাকা মাদকসেবীদের তালিকা করার নির্দেশনা দেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তার নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকা ধরে প্রথমে তাদের সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। যদি মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যরা সংশোধন না হন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর সমাজকে মাদকমুক্ত করতে হলে প্রথমে নিজেদের মাদকমুক্ত করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য মাদক সেবন কিংবা মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ওই অপরাধ সভায় ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনাগুলো হলো, পুলিশ সদস্যদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আর কোনো পুলিশ সদস্যের যদি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে।

ডিএমপির একাধিক উপ-কমিশনারের (ডিসি) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাস দেড়েক আগে ডিএমপি সদর দফতরে পুলিশের প্রায় ৫০ জন মাদকসেবীর একটি তালিকা জমা পড়েছে। ঢাকায় পুলিশের ৮টি বিভাগের কাছে একই তালিকা চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বিভাগের ডিসিরাও সেই চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর ৫০টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে মাদকসেবী পুলিশ সদস্যদের নাম চেয়েছেন। তবে থানার ওসিরা বলছেন, এ তালিকা প্রস্তুত করা অনেক কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া। সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কাউকে মাদকসেবী হিসেবে অভিযুক্ত করা যায় না। আর সুনির্দিষ্ট ও নিখুঁতভাবে তালিকা প্রস্তুত করতে হলে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া থাকা জরুরি। এ পদ্ধতি শুরু হলে সহজেই মাদকসেবীকে চিহ্নিত করা সম্ভব। এ পদ্ধতি অনুসরণ না করে যদি কাউকে অভিযুক্ত করা হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি উল্টো মামলা করে বিচার চাইতে পারেন। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে তালিকাটি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে পুলিশের ৩৮৮ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, বিক্রি ও পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। জড়িত সদস্যদের অভিযোগ তদন্ত করছে পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মনিরুজ্জামান বলেন, মাদকের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এর তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। সে তালিকা অনুযায়ী তাদের সংশোধনের জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর পরও একই কাজে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার রেদোয়ান পেট্রল পাম্পের সামনে ফার্নিচার-বোঝাই ট্রাকে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে র‌্যাব। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশের এসআই বদরুদ্দোজা মাহমুদকে গ্রেফতার করে খুলশী থানা পুলিশ। ২২ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ পুলিশের বরখাস্ত হওয়া এক এএসআই সালাউদ্দিন ও তার গাড়িচালক রনিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ২২ জুন সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মাদকসহ এক পুলিশ সদস্য ও তার সহযোগীকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আটক ওই পুলিশ সদস্যের নাম ফজলুল হক এবং তার সহযোগী তামাই গ্রামের মনিরুল ইসলাম। গত ৮ জানুয়ারি বরিশালের লাকুটিয়া সড়ক থেকে দুই পুলিশ সদস্যকে ৪০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরা হলেন বরিশাল রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) কনস্টেবল পার্থচন্দ্র দে ও তানজিলুর রহমান। এর আগে গত বছর ১১ ডিসেম্বর বরিশাল নগরের আল-শামস নামক আবাসিক হোটেল থেকে ইয়াবাসহ ভোলা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল রমজান আলী ও তার দুই সহযোগীকে আটক করে থানা পুলিশ। একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মহানগর পুলিশের কনস্টেবল সাইফুল ইসলামসহ তিনজনকে আটক করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪৫২ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। ৭ জুলাই বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের শাঁখারিয়া বাজার থেকে বরিশাল মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ কনস্টেবল কাম কম্পিউটার অপারেটর মেহেদী হাসানকে ২৯ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়।

সর্বশেষ খবর