বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
আলোচনা সভা

আগামী নির্বাচনে বড় হুমকি ফেক নিউজ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক হয়ে দেখা দেওয়া সোশ্যাল মিডিয়ার ফেক নিউজ বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বড় হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। স্বার্থান্বেষী যে কোনো পক্ষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য গুজব ছড়িয়ে দেশকে অশান্ত করার অপচেষ্টা চালাতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের সচেতনতাই পারে ফেক নিউজের বড় ধরনের যে কোনো অপপ্রচার রুখতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার নিয়ে গতকাল ঢাকায় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের বক্তারা অভিন্ন এ সতর্কতা উচ্চারণ করেন।

রাজধানীর বারিধারার কূটনৈতিকপাড়ার একটি হোটেলে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  উগ্রবাদ ও ভুয়া কন্টেন্ট : চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘মুভ ফাউন্ডেশন’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়াউল আহসান। আলোচনায় অংশ নেন কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনওয়া প্রেফন্টেন, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা মাওলানা আলতাফ হোসাইন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত, অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান, কওমি মাদ্রাসা ছাত্রদের পেইজের এডমিন সালাহ উদ্দিন জাহাঙ্গীর প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্মীয় উসকানি দিয়ে ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় গুজব ছড়িয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হয়েছে। এসবের পেছনে রাজনৈতিক সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে তিনি বলেন, যে কেউ তার নাম ও পরিচয় প্রকাশ করে মত প্রকাশ করতেই পারে। তবে নাম-পরিচয় গোপন করে ভুয়া আইডি থেকে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে না। যদি কেউ এটা করে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। হানিফ বলেন, এমন বাক-স্বাধীনতা আমরা চাই না, যেটা সমাজে হানাহানি সৃষ্টি করে। এমন গণতন্ত্র আমরা চাই না, যে গণতন্ত্রের নামে মানুষ পোড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটে। তিনি বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে।ফ্রিডম অব স্পিচ—বাক-স্বাধীনতার নাম করে যা খুশি তাই বলে যাবে, এটা কোনো দায়িত্বশীল মানুষের আচরণ হতে পারে না। আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল ইসলাম কারাগারে আছেন। এটা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে।

 কিন্তু আপনারা যদি খেয়াল করেন, আল-জাজিরায় উনি (শহিদুল) যে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন, সেখানে সাংবাদিকের করা প্রশ্ন বাদ দিয়ে, উসকানিমূলক বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা কথা বলে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। পাশাপাশি বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছিলেন। উসকানিমূলক কথাবার্তার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার পরেও যদি তার বিরুদ্ধে মামলা না হয়, কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তাহলে তো দেশে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু থাকবে না।

কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনওয়া প্রেফন্টেন বলেন, ফেক নিউজ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। আজকে বাংলাদেশে না হয়ে যদি কানাডায় এ আলোচনা সভা হতো, সেখানেও একই ধরনের শঙ্কার কথা উঠে আসত।

ড. গোলাম রহমান বলেন, মাত্র এক যুগেরও কম সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার শুরু হলেও এর ব্যাপ্তি এতটাই বেড়েছে যে, একে অস্বীকার করার উপায় নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারে সেটা আমরা দেখেছি। আবার গুজব ছড়িয়ে মুহূর্তে তাণ্ডব চালাতে সহযোগিতা করতেও দেখেছি এই সোশ্যাল মিডিয়াকে। বিশ্বে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে এসব সোশ্যাল মিডিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত সমাজ ব্যবস্থাতে সোশ্যাল মিডিয়ার ফেক নিউজ নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে বলে জোর অভিযোগ আছে। তাই বাংলাদেশের শঙ্কা কোন অংশেই কম নয়।

ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া হলো দুই পাশ ধারালো চাকুর মতো। এটিকে আসলে ভালো না খারাপ কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে এর ব্যবহারকারীকেই।

সর্বশেষ খবর