বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

সিংড়া জাতীয় উদ্যানে সবুজের হাতছানি

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

সিংড়া জাতীয় উদ্যানে সবুজের হাতছানি

এক সময় বাঘ, নীল গাইসহ বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র ছিল গহিন অরণ্য সিংড়া ফরেস্ট। সুন্দর নিরিবিলি গাছ-গাছালির মোহনীয় প্রকৃতির নয়নাভিরাম সিংড়া ফরেস্ট; যা দর্শনার্থী, পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থক। এ বনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নর্ত নদ। কেউ যদি বনভোজন উৎসব করতে চান- তাহলে আসতে হবে শীতকালে। আর যদি বনের সবুজময় ভরা যৌবন ও নদের উচ্ছলতা দেখতে চান তাহলে আসতে হবে ভরা বর্ষাকালে। সরকার এই পর্যটন এলাকার সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পর্যটকদের আকর্ষণীয় ও চিত্তবিনোদনের জন্য সিংড়া ফরেস্টকে ‘সিংড়া জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এই শালবন তথা জাতীয় উদ্যানটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। সারি সারি আকাশছোঁয়া দীর্ঘ শাল গাছের সবুজ আচ্ছাদন পর্যটকদের দূর থেকে যেন হাতছানি দিয়ে ডেকে যায়, যা উপেক্ষা করা যে কোনো পর্যটকের পক্ষে কষ্টসাধ্য। বনের মধ্যদিয়ে মেঠো পথে একাকি হাঁটতে হাঁটতে এ সময় হয়তো মনে পড়বে সেই পুরনো দিনের গান। সিংড়া ফরেস্টে প্রবেশের সময় দুই ধারে এবং নদের দুই পাড়েও রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি গাছ। শালবনের ভিতরের আগর ও বাঁশ-বেত বাগানও সবার কাছে দর্শনীয়ও বটে। বনের গভীরে যেতে চোখে পড়বে প্রাচীন পত্রঝরা সিংড়ার বনাঞ্চল শালবন।

 তবে শাল ছাড়াও জারুল, তরুল, শিলকড়ই, শিমুল, মিনজিরি, সেগুন, গামার, আকাশমণি, ঘোড়ানিম, সোনালু, গুটিজাম, হরীতকীসহ নাম না জানা উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম রয়েছে। এ ছাড়া খরগোশ, শেয়াল, সাপ, বেজি এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও পতঙ্গ দেখতে পাওয়া যাবে এই বনে। নদের তীর ধরে বনের মধ্য কিছু দূর গেলেই চোখে পড়বে আদিবাসী সাঁওতাল পুরুষ-রমণীদের চাঁই অথবা জাল দিয়ে নদের ছোট ছোট মাছ ধরার চমৎকার দৃশ্য। এ ছাড়া বনের মধ্যে রয়েছে বড় বড় উইপোকার মাটি দিয়ে তৈরি ঢিবি, লম্বা লম্বা গিলা লতা। গ্রামীণ আবহে অত্যন্ত কাছ থেকে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা দেখা যাবে। এর অবস্থান দিনাজপুর শহর থেকে সড়কপথে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে বীরগঞ্জ উপজেলায়। বীরগঞ্জ শহর থেকে এর দূরত্ব ৪ কিলোমিটার। দিনাজপুর থেকে বীরগঞ্জ হয়ে সড়কপথে আসা যায়। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য রয়েছে একটি ছোট পরিসরে রেস্ট হাউস। দুটি পিকনিক স্পট। পর্যটকরা জানান, রাবার ড্যামের মাধ্যমে বারো মাস নর্ত নদকে সজীব রাখা, একটি টাওয়ার স্থাপন, শিশু পার্ক তৈরি, সুন্দর একটি ফটক নির্মাণসহ কিছু সংস্কারমূলক কাজ করা হলে এখানে দর্শনার্থী ৩ থেকে ৪ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দর্শনার্থী বাড়লে রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি সিংড়া শালবন ফিরে পাবে তার অতীত ইতিহাস। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের অক্টোবরে বীরগঞ্জের ভোগনগর ইউনিয়নের ৮৫৫.৫০ একর ভূমির ওপর অবস্থিত এই বনের ৭৫৫.৫০ একর জমিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে বন বিভাগ।

সর্বশেষ খবর