বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আতঙ্কে মাদক ব্যবসায়ীরা

সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি

সাখাওয়াত কাওসার

দেশজুড়ে চলমান মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের মুখে চরম আতঙ্কে রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও গ্রেফতারের ভয়ে গডফাদাররা এখন আত্মগোপনে। তবে অভিযোগ রয়েছে, তারা নিজেদের আড়ালে রেখে নতুন নতুন কৌশলে সহযোগীদের দিয়ে ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে। মাদক নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান অভিযানে মাদক বন্ধ না হলেও আগের মতো প্রকাশ্য ব্যবসা নেই। মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে অনেক ভয় কাজ করছে। অন্যদিকে ইয়াবার বিকল্প হিসেবে নতুন মাদক ‘খাত’ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন অভিভাবক ও সচেতন মহল। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা জোর দিয়ে বলছেন, যে কোনো মূল্যে তারা খাতের বিস্তার রুখবেন।

উল্লেখ্য, ঘোষণা দিয়ে ১৮ মে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে পুলিশ। তবে এর আগে ৪ মে থেকে পৃথক অভিযানে নামে র‌্যাব। পুলিশ সদর দফতর বলছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে ২৫০ জন নিহত হয়েছে। গ্রেফতারের সংখ্যা অর্ধ লাখেরও বেশি। মামলার সংখ্যা ৩৫ হাজার। র‌্যাব জানিয়েছে, এ পরিসংখ্যানের মধ্যে তাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ৮ হাজার ৭৩৩ জন, নিহত মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৭৮। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অবস্থানের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান চলবে। মাদকের সঙ্গে যারাই জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যত বড় প্রভাবশালীই হোক, কেউ ছাড় পাবে না। এ ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্সে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের আগে পাঁচটি সংস্থা পৃথকভাবে তালিকা তৈরি করেছিল। এসব তালিকায় সর্বমোট মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল ৪ হাজার। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে সর্বশেষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুত করা তালিকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৫৫০। এর মধ্যে প্রায় দেড় শ রয়েছেন মদদদাতা। সবচেয়ে বেশি মাদক ব্যবসায়ীর অবস্থান কক্সবাজারে। বর্তমানে রাজধানীতে তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৮২। ওয়াকিবহালরা মনে করছেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসা পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে মাদক রোধ করা সম্ভব নয়। এদিকে ৩১ আগস্ট শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন মাদক ‘খাত’ উদ্ধারের পর গতকাল পর্যন্ত ডিএনসিসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রায় ৩ হাজার কেজি খাত জব্দ করেছে। গ্রেফতার করেছে আমদানিকারক তিনজনকে। তাদের কাছ থেকে পিলে চমকানো অনেক তথ্য পেয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। নতুন মাদক খাত দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হচ্ছে সিসা বার ও বিভিন্ন হারবাল ওষুধ কোম্পানিতে। অভিজাত এলাকার বখে যাওয়া যুবক-যুবতীরা ভয়ঙ্কর এ মাদক নিচ্ছে ইয়াবার বিকল্প হিসেবে। মাদকে নতুন করে খাতের বিষয়টি উঠে আসায় ভাবনায় ফেলে দিয়েছে অভিভাবক ও সচেতন মহলকে। তবে আশার কথা, খাতের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের কারণে এর ব্যবসায়ীরাও দারুণ বেকায়দায় আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মাদকের নির্মূলে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করছি। অনেক সীমাবদ্ধতার পরও ডিএনসির সব সদস্য তাদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ আলী শিকদার (অব.) বলেন, একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য মাদকই যথেষ্ট। ইয়াবার মতো ভয়ঙ্কর মাদক কোথা থেকে আসছে, কোন পয়েন্ট দিয়ে আসছে, তা তো দেশের সবকটি গোয়েন্দা সংস্থা, এমনকি সরকারের সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত অবগত। অভিযানের কারণে মাদক নির্মূলের ক্ষেত্রে অনেক সুফল এসেছে এটা সত্য, তবে এ ক্ষেত্রে আরও আন্তরিকতা ও অভিযানের জন্য কঠোর মনিটরিং এবং জবাবদিহি দরকার। ওয়াকিবহালরা বলছেন, চলমান সাঁড়াশি অভিযান মাদক নির্মূলে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে এটা সত্য, তবে এর আগ্রাসন থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে গডফাদারদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শুধু কিছুসংখ্যক খুচরা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না। এদিকে খাত প্রসঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপমহাপরিদর্শক মো. শাহ আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খাত যাতে ইয়াবার মতো না হয়ে উঠতে পারে, সেজন্য কাজ করে যাচ্ছি। এর নেটওয়ার্ক চেইন ভেঙে দিতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর