বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

‘সুকুক’ আসছে বাংলাদেশে

গভর্নরকে চিঠি আইডিবি প্রেসিডেন্টের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ইসলামী বন্ড ‘সুকুক’ বাংলাদেশে চালু করতে চায় ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। এরই মধ্যে ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করতে চায় আইডিবি। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দেখছে তারা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, তারা চিঠি পেয়েছেন, তবে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার বন্ডে বিনিয়োগের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে।  অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা ইতিবাচক প্রস্তাব। ‘সুকুক’ বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তহবিল বড় হলে সেখান থেকে আমরাও আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য সহজ শর্তে ঋণ আনতে পারব। তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোরও বাজে ঋণ দিয়ে খেলাপি না বাড়িয়ে এ ধরনের গুণগত মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক বন্ডে বিনিয়োগ করা উচিত। জানা গেছে, বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি অমুসলিম দেশেও ‘সুকুক’ বেশ সাফল্য ও গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। এই বন্ডটি সর্বাধিক জনপ্রিয় সৌদি আরবে। সুকুকের মোট শেয়ারের প্রায় ৩৯ শতাংশ দেশটির দখলে। দ্বিতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া। দেশটির উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে এই বন্ড। ২০১৮ সালের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ইসলামিক বন্ড সুকুকের ৩৩ শতাংশ শেয়ার মালয়েশিয়ার দখলে। এরপরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, কাতার, ওমান, তুরস্ক, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, হংকং, নাইজেরিয়া, ব্রুনাই ও জর্ডান। এই দেশগুলো বড় ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন বা জরুরি তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে ‘সুকুক’ বন্ড চালু করছে। তবে মুসলিমপ্রধান দেশ হলেও বাংলাদেশ এ ধরনের ইসলামী বন্ড চালুর ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বলে সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এর এক সেমিনারে উল্লেখ করা হয়। ওই সেমিনারে বলা হয়, ইসলামিক বন্ডে বিনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ নম্বরে। মাত্র দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ ইসলামিক বন্ডের শেয়ার আছে এ দেশে। সূত্রগুলো জানায়, মূলধনী বিনিয়োগ বাড়াতে কয়েক বছর আগে ইসলামী রীতিতে ‘সুকুক’ বন্ড চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি)। ২০১৫ সালে পুঁজিবাজার উন্নয়নে ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএমডিপি) আওতায় ২৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চুক্তির শর্তে ‘সুকুক বন্ড’ নীতিমালা তৈরির প্রতি জোর দিয়েছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির শর্ত ছিল ২০১৭ সালের মধ্যে বিএসইসিকে ‘সুকুক বন্ড’ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। তবে সেই নীতিমালা হয়নি বলে জানা গেছে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বন্ড বাজার আরও শক্তিশালী করা দরকার। এ ছাড়া শরিয়াহভিত্তিক ইসলামিক বিকল্প বন্ড ‘সুকুক’ ইস্যুর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে বড় বড় সেতু, মেট্রো রেল ও রেললাইন সম্প্রসারণসহ বহু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ইসডিবি সুকুক বন্ড ছেড়ে যেভাবে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে একইভাবে বাংলাদেশও একই ধরনের ইসলামী বন্ড ছেড়ে অবকাঠামো উন্নয়নে তহবিল সংগ্রহ করতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর