রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

জাতিসংঘে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হবে শেখ হাসিনার

রুহুল আমিন রাসেল ও কাজী শাহেদ, নিউইয়র্ক থেকে

আজ থেকে শুরু হওয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশন চলার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত বৈঠক হবে এবং এ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হবে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসূচির আলোকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আহূত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি আরও জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে বিশ্ব মাদক সমস্যা বিষয়ে বৈশ্বিক আহ্বান সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। এ সময় ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি একান্তে কথা বলবেন। এ ছাড়া ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত একটি গোলটেবিল বৈঠকেও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক  উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, বঙ্গবন্ধুর অপর কন্যা শেখ রেহানাও থাকবেন সফরসঙ্গী হিসেবে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জাতিসংঘের আমন্ত্রণে অটিজম সম্পর্কিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, ৯০ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও রয়েছেন এর মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর এসডিজিবিষয়ক সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদসহ পদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা থাকছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতিসংঘের বৈঠকে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাবিষয়ক, উন্নয়নবিষয়ক— বিশেষত শিক্ষা ও নারী অধিকার, আন্তর্জাতিক শান্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা বিষয়কে প্রাধান্য দেবেন।

জাতিসংঘে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন উল্লেখ করেন, বিএনপিকে জাতিসংঘের মহাসচিব কোনো আমন্ত্রণ করেননি। বিএনপি নেতারা নিজ উদ্যোগে দেখা করতে এসেছিলেন। জাতিসংঘের একটি রাজনৈতিকবিষয়ক বিভাগ আছে। তারা সেখানে যোগাযোগ করেছেন। তবে আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বিএনপিকে জাতিসংঘের মহাসচিব কোনো আমন্ত্রণ করেননি। তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন বিভাগের দফতরে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দেখা করেন। এটা বিশেষ কিছু নয়। ফলে বিএনপি নেতাদের এমন সাক্ষাতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।

সংবাদ সম্মেলনে ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে এবারের অধিবেশনে গতবারের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অর্জনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সারা বছরই গণমাধ্যমকে হালনাগাদ রেখেছে। জাতিসংঘে এ বিষয়ে যখনই যা হয়েছে তা জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে, যা দৃশ্যমান। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর এবারের জাতিসংঘে উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও জোর সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করবে। আজ থেকে শুরু হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে— ‘মেকিং দ্য ইউনাটেড নেশন রিলেভেন টু অল পিপুল : গ্লোবাল লিডারশিপ অ্যান্ড শেয়ারড রেসপনসিবিলিটিস ফর পিসফুল, ইক্যুয়াটিবিল অ্যান্ড সাসটেইনেবল সোসাইটি’। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে তিনি জাতিসংঘকে মানুষের ভবিষ্যৎ আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রস্থল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

এবারের এই প্রতিপাদ্য জাতির পিতার প্রদত্ত ভাষণের সেই অভীষ্ট লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, জলবায়ু ঝুঁকির ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এ বিষয়ে আলোচনা হবে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে এ নিয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌঁছাবেন আজ দুপুরে। এদিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে ভাষণ দেবেন। এর আগে সকালে বিশ্ব মাদক সমস্যা বিষয়ে বৈশ্বিক আহ্বান সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন। ইভেন্টটির আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য ২৯টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এর সহ-আয়োজক। এ সময় উপস্থিত থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিব। একই দিনে শরণার্থীবিষয়ক বৈশ্বিক কমপ্যাক্ট ও শিক্ষাবিষয়ক দুটি উচ্চ পর্যায়ের হাই-লেভেল ইভেন্টে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া দুপুরে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত একটি রাউন্ড টেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাইবার সিকিউরিটি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য রাখবেন। এতে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও সিঙ্গাপুর কো-স্পন্সর করছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের আয়োজনে অ্যাকশন ফর পিস কিপিং বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। পিস কিপিং বিষয়ক এই ইভেন্টে প্রদেয় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ক্রমাগত উন্নতির বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। এ ছাড়া তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কিত একটি প্যানেলে যোগ দেবেন। শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। ভাষাগত সমস্যার কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ভাষা সমস্যা দূর করতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশকে। জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে ২৬ সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের জেনারেল ডিবেট অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেবেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে গতবারের উত্থাপিত পাঁচ দফা সুপারিশমালার ধারাবাহিকতায় এবারও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখবেন। তার বক্তব্যে থাকবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য গাঁথার বিষয়গুলো। ‘রূপকল্প-২০২১’ এর আলোকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে সরকার যে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে, সে বিষয়ে আলোকপাতের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশাগুলোও তার বক্তৃতায় থাকবে। এর আগে লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রপতি আয়োজিত ‘নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন’ বিষয়ক সাইড ইভেন্টে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষা ও নারী অধিকার বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টগুলোতে প্রধানমন্ত্রী নারীর শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ তুলে ধরবেন। এসব ইভেন্টে উপস্থিত থাকবেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী, লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈশ্বিক শিক্ষাবিষয়ক বিশেষ দূত গর্ডন ব্রাউন। ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ মিশনে এই সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিব, কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত একটি রিসেপশন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড পেতে যাচ্ছেন। এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অংশগ্রহণ বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরও সুসংহত করবে। একই সঙ্গে জাতিসংঘের হাত ধরে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের বহুমুখী সফলতা ও অবদানের কথা তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হবে।

সর্বশেষ খবর