মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বে-টার্মিনাল নির্মাণে এবার ভারতীয় কোম্পানির প্রস্তাব

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চট্টগ্রামে বে-টার্মিনাল নির্মাণে এবার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে ভারতের একটি কোম্পানি। এপিএম টার্মিনালস (ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড) নামে এই কোম্পানিটি গত মাসে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) কাছে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে সই করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা স্কট রবসন।

বে-টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি একটি যৌথ কোম্পানি যেখানে ভারত সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত সংস্থা কনটেইনার কো-অপারেশন অব ইন্ডিয়া (কনকোর) এবং নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক এপি মোলার মেয়ারস্ক (এপিএম) গ্রুপের যৌথ বিনিয়োগ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমুদ্র বন্দর ছাড়াও ভারতের মুম্বাই ও চেন্নাই সমুদ্র বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত রয়েছে এই কোম্পানিটি। এপিএম টার্মিনালস গত বছর ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করেছে বলে জানিয়েছে। চীন এবং কোরিয়ার দুটি কোম্পানিও বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে চবকের এই টার্মিনাল নির্মাণে। আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব পাঠিয়েছে সিঙ্গাপুর ও আরব আমিরাতের দুটি কোম্পানিও। গত বছরের মে মাসে চীনের চায়না মার্চেন্টস স্পোর্ট হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড জি টু জি পদ্ধতিতে বে-টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দেয়। পরে তারা বিওটি (বিল্ট অওন ট্রান্সফার) পদ্ধতিতেও প্রকল্প নির্মাণ এবং ৫০ বছরের কনসেশন চুক্তি সম্পন্ন করার আগ্রহ প্রকাশ করে। কোরিয়ান সরকারের মিনিস্ট্রি অব ফিশারিজ ও ওশানোগ্রাফির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন পূর্ণাঙ্গ টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক কাজ করার বিষয়েও আগ্রহ দেখিয়েছে। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি পিএসএ টার্মিনাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডও প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব প্রস্তাবনা বিবেচনায় কোন দেশকে কাজটি দেওয়া হবে সে বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা জানতে চেয়ে সম্প্রতি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল চবক। এরই মধ্যে গত ২৭ আগস্ট ভারতের এপিএম টার্মিনালস আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা পাঠায়। সূত্র জানায়, ভারতীয় কোম্পানিটি বে-টার্মিনাল নির্মাণে কীভাবে কাজটি করবে, টার্মিনাল নির্মাণ না-কি পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত থাকতে চায়, তারা প্রকল্পে কোন কাজটি করতে আগ্রহী-এ ধরনের ১০টি প্রশ্ন করা হয়েছিল চবকের পক্ষ থেকে। প্রস্তাবনায় তারা এই দশটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলেছে, বিল্ট অওন ট্রান্সফার (বিওটি) পদ্ধতিতে তারা বে-টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায়। প্রাথমিকভাবে তারা শুধু নির্মাণের সঙ্গেই সম্পৃক্ত থাকতে চায়। নির্মাণ শেষ হলে টার্মিনাল পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। প্রস্তাবিত টার্মিনালের তিনটি ফেজে কনটেইনার টার্মিনাল (১), কনটেইনার টার্মিনাল (২) এবং মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এই তিনটি কাজই তারা করতে আগ্রহী বলে প্রস্তাবনায় জানায়।   কোম্পানিটির কাছে বে-টার্মিনাল নির্মাণে আনুমানিক ব্যয় সম্পর্কেও জানতে চেয়েছিল চবক। জবাবে এপিএম জানিয়েছে, এই মুহূর্তে তারা বাংলাদেশের এই প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে পারবে না। তবে তারা মনে করছে প্রথম টার্মিনাল নির্মাণে ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার, ২য় টার্মিনাল নির্মাণে ২০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার এবং তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে ২০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মতো ব্যয় হতে পারে। মূল অবকাঠামো নির্মাণে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগতে পারে বলেও জানিয়েছে ভারতীয় কোম্পানিটি। চবক চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ পিএসসি, বিএন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বে-টার্মিনাল নির্মাণে আমরা কয়েকটি দেশের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছি।  কোন দেশের প্রতিষ্ঠান কাজটি পাবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে দেখছি। সূত্রগুলো জানায়, এরই মধ্যে প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল নির্মাণের সমীক্ষা শেষ হয়েছে। একটি মাস্টারপ্ল্যানও পাওয়া গেছে। সে অনুযায়ী প্রকল্পটিতে মোট তিনটি টার্মিনাল হবে। একটি ১৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, আরেকটি ১২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল ও অপরটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল-২। প্রস্তাবিত প্রকল্প নির্মাণে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) এবং জি টু জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বে-টার্মিনাল হলে আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরে বাংলাদেশে নতুন বন্দরের প্রয়োজন পড়বে না। তা ছাড়া বে-টার্মিনাল অতি অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ করা সম্ভব। এজন্য যে বিনিয়োগ হবে তার রিটার্নও আসবে দ্রুত। যে কারণে এই প্রকল্পে বিনিয়োগে সবার আগ্রহ বেশি। অপরদিকে এই প্রকল্পের আয়তন চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় সমান হলেও উৎপাদনশীলতা হবে অনেক বেশি। সহজে বড় জাহাজ বে-টার্মিনালে আসতে পারবে। ২৪ ঘণ্টা জাহাজ চলাচল করতে পারবে। বে-টার্মিনাল প্রতিষ্ঠা হলে স্বল্প সময়ে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করে সড়ক, নৌ ও রেলপথে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পণ্য পৌঁছাতে পারবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর