মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর ধাক্কা পার্টি

মির্জা মেহেদী তমাল

ভয়ঙ্কর ধাক্কা পার্টি

আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টের কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ। বাসা ঢাকার মোহাম্মদপুরে। ব্যক্তিগত কাজে আগারগাঁও আইডিবি ভবন থেকে একটি কম্পিউটার কেনেন। কাছাকাছি বাসা হওয়ায় কম্পিউটার নিয়ে তিনি রিকশা ভাড়া করেন। রিকশায় চড়ে তিনি বাসার উদ্দেশে রওনা হন।

রিকশাটি আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস দিয়ে শ্যামলী শিশুমেলা হয়ে কলেজ গেটের দিকে যাচ্ছিল।  সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের গেটের সামনে পৌঁছা মাত্র রিকশার গতি কমে যায়। রিকশাচালক সাইড করেন রিকশা। তানভীর জানতে চান, কোনো সমস্যা হয়েছে কি না? রিকশাচালক তানভীরকে নামতে অনুরোধ করেন। তানভীর কম্পিউটার রিকশার পাদানিতে রেখে নেমে দাঁড়ান। রিকশাচালক রিকশার একটি চাকা ধরে পরীক্ষা করছেন। এ সময় তানভীরের পাশ দিয়েই ৪/৫ জন যুবক হেঁটে যাচ্ছিলেন। একজন তাকে ধাক্কা দেয়। সেই যুবকদের একজনের হাতে ছিল ‘আমড়া’ ভর্তি একটি ডালা। যুবকটির ধাক্কায় তানভীর যেয়ে পড়ে আমড়া বিক্রেতার ওপর। হাত থেকে আমড়া ভর্তি ডালাটি পড়ে যায়। রাস্তার ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আমড়াগুলো। এ সময় আমরা বিক্রেতা তানভীরের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেয়। তানভীর এ সময় প্রথমে যে যুবকটি তাকে ধাক্কা দিয়েছিল তাকে দেখিয়ে বলে, ‘আরে ভাই আমি ধাক্কা দেইনি। ওই লোকটি আমাকে ধাক্কা দিলে আমি আপনার ওপর পড়ে যাই। এতে আমার কোনো দোষ নেই।’ এ কথা শুনে সেই যুবকটি ক্ষেপে যায়। যুবকটির সঙ্গে ছিল আরও ৪ যুবক। তারাও এতে অংশ নেয়। তানভীরকে গালাগাল করতে থাকে। তানভীর তাদের মুখে লাগাম রেখে কথা বলার অনুরোধ করে। এতে যুবকরা আরও ক্ষেপে যায়। তানভীরকে তারা ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে তারা তানভীরকে রাস্তার এক পাশে নিয়ে যায়। পাঁচ মিনিট ধরে তারা তাকে ঘিরে রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। কেউ কেউ তাকে মারধর করার চেষ্টা করে। ‘আমড়া’ বিক্রেতাও তাদের সঙ্গে ছিল। এ সময় পথচারীদের কেউ তাকে রক্ষায় যখন এগিয়ে আসছে না, তানভীর তখন ভয় পেয়ে যান। তিনি তাদের কাছে উল্টো ক্ষমা চেয়ে নেন। এ সময় যুবকরা হঠাৎ ঠাণ্ডা হয়ে যায়। তারা বলে, ঠিক আছে, আপনি যখন ক্ষমা চাচ্ছেন আপনি চলে যান। রাস্তায় চলাচল করার সময় দেখেশুনে চলবেন। ছাড়া পেয়ে তিনি   যেখানে রিকশা রেখে গিয়েছেন সেখানে দ্রুত যান। তানভীরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। রিকশাটি নেই! তানভীর রাস্তায় দাঁড়িয়ে আশপাশে দেখার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু চোখে পড়ছে না সেই রিকশা। আশপাশে পান দোকানদারদের তিনি জিজ্ঞাস করেন, কম্পিউটারসহ কোনো রিকশা তারা যেতে দেখেছেন কিনা। কিন্তু কেউ খেয়াল করেনি বলেই তাকে জানায়। রাস্তায় ছোটাছুটি করতে থাকেন তানভীর। বেতনের টাকা থেকে কিছু কিছু জমিয়ে তিনি কম্পিউটার কিনেছেন। বাসা পর্যন্ত তিনি নিতে পারলেন না। তানভীরকে যুবকরা রাস্তার পাশে যেখানে নিয়ে গিয়েছিল সেখানে ছুটে যান। সেখানে সেই যুবকরা নেই। তখনই তিনি বুঝতে পারেন বিষয়টি। রিকশার থেমে যাওয়া, হঠাৎ কয়েকজন যুবকের আগমন, ধাক্কা দিয়ে ফেরিওয়ালার ওপর ফেলে দেওয়া এবং তাকে রাস্তার পাশে নিয়ে ঘিরে ধরে রাখা—এসবই এক সুতোয় গাঁথা। সেই রিকশাচালকও এই অপরাধী চক্রের সদস্য বলে তিনি নিশ্চিত হন। আশপাশ দোকানদাররাও বলছিলেন তাকে এমন কথাই। প্রায় দিনই এমন ঘটনা ঘটছে। পথিমধ্যে লোকজন কম্পিউটারসহ মালামাল হারিয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন। কিন্তু এসবের কোনো শেষ নেই। দিনদুপুরে এসব ঘটনা ঘটলেও আক্রান্তকারীদের রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসে না।

ভুক্তভোগী তানভীর বলেন, তিনি আর সেই কম্পিউটার খুঁজে পাননি। রিকশাচালক আর সেই যুবকরা একই চক্র। এমন ঘটনা নাকি ওই সব সড়কে প্রায়ই হচ্ছে। আইডিবি ভবন থেকে যারা রিকশায় করে কম্পিউটার নিজ গন্তব্যে নিয়ে যায়, সুযোগ মতো তারা পথিমধ্যেই কোনো ঘটনা ঘটিয়ে কম্পিউটার নিয়ে চম্পট দেয়। পুলিশ জানায়, সংঘবদ্ধ এমন ধাক্কা পার্টি দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের কাজ করে আসছিল। তবে হালে কিছুটা কমেছে। তবে যারা কম্পিউটার বা অন্য মালামাল রিকশায় করে গন্তব্যে নিয়ে যান, তাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। রিকশা থেকে নেমে রিকশার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এখন টহল পুলিশ থাকে সবখানে। তাদের সহযোগিতা অবশ্যই নিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর