শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দখলের কবলে রাজধানীর তিন ফ্লাইওভার

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দখলের কবলে রাজধানীর তিন ফ্লাইওভার

ফ্লাইওভারের নিচে সারি সারি বাস রাখা। কোনোটার চলছে মেরামত, কোনোটার ধোয়ামোছা। একপাশে প্রভাতী বনশ্রী, এয়ারপোর্ট বঙ্গবন্ধু পরিবহন, আজমেরী গ্লোরি কোম্পানির বাস, অন্যপাশে সারি সারি দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলে নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে শুভযাত্রা পরিবহনের বাসগুলো। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকের সামনে এভাবে ফ্লাইওভারের জায়গা দখল হলেও নজর নেই কর্তৃপক্ষের। শুধু এই ফ্লাইওভার নয়, মালিবাগ-মৌচাক এবং কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের অংশ দিনের পর দিন দখল করে গাড়ি-রিকশার গ্যারেজ, ভাতের হোটেল, চা, জুসের দোকান গড়ে তুললেও কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। নগর বিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফ্লাইওভার ভাঙছে আর আমাদের দেশে নিত্যনতুন ফ্লাইওভার তৈরি হচ্ছে। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ফ্লাইওভারগুলো গলার কাঁটায় পরিণত হচ্ছে। ফ্লাইওভারের নিচে ফাঁকা জায়গায় বাগান, বসার জায়গার জন্য ব্যবস্থা ছাড়াও নানারকম নান্দনিক স্থাপনার পরিকল্পনা ছিল। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ফাঁকা জায়গাগুলো গিলে খাচ্ছে দখলদাররা।’

গতকাল সরেজমিন ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা লোহার বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা। কিন্তু ভিতরে ঘোড়া বাঁধা। রয়েছে ঘোড়ার খাওয়ার ব্যবস্থাও। জায়গাটিকে আস্তাবল বানিয়ে ফেলা হয়েছে। সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় লোহার বেড়ার বেশ খানিক অংশ কেটে দরজা বানানো হয়েছে। এই জায়গা দিয়েই ঘোড়াগুলোকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাস্তার আরেক পাশে সারি সারি দাঁড় করানো রয়েছে ঘোড়ার গাড়ি। রাস্তার আরেক পাশে মোড় থেকে শুরু করে ফুলবাড়িয়া মার্কেটের সামনে পর্যন্ত সারি সারি বাস দাঁড় করানো। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রধান ফটকের সামনে বছরের পর বছর ধরে এভাবে বাস রাখা হলেও নেওয়া হয় না কোনো ব্যবস্থা। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে নিমতলী পর্যন্ত হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের বিভিন্ন অংশে দুই শতাধিক চা ও ফলের দোকান এবং ভাতের হোটেল। এ ছাড়া আছে মুরগির দোকান, মাছের আড়ত।

রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচের ফাঁকা জায়গা দখল করে ভাতের হোটেল, গাড়ির গ্যারেজ, কুঁড়েঘর তৈরি করে চলছে ভাড়া খাটানোর জমজমাট ব্যবসা। সিগন্যালের লাইট ও সড়কবাতি না জ্বলায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের যাত্রীরা। মালিবাগ ও মগবাজার মোড়ে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ টেম্পোস্ট্যান্ড। মালিবাগ রেলগেট ও রাজারবাগে সোহাগ ও গ্রিনলাইন কাউন্টার ঘিরে তৈরি হচ্ছে যানজট। এ ছাড়া মগবাজার রেলগেটে ফ্লাইওভারের নিচে জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মোটরসাইকেলের গ্যারেজ। এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ফ্লাইওভারের নিচের দখল হয়ে যাওয়া জায়গা পুনরুদ্ধারে আমরা প্রায়ই উচ্ছেদ অভিযান চালাই। কিন্তু উচ্ছেদের কিছুদিন পরই আবার দখল হয়ে যায়। তাই এগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সহযোগিতা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর