শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর নেশা নিষিদ্ধ পেশা

মির্জা মেহেদী তমাল

ভয়ঙ্কর নেশা নিষিদ্ধ পেশা

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এএসআই আলম সরোয়ার্দী রুবেল। তিনি ইয়াবায় আসক্ত। প্রতিদিন তার ৩০ পিস ইয়াবার প্রয়োজন পড়ে। নইলে কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না তিনি। কিন্তু প্রতিদিন ৩০টা ইয়াবার টাকা জোগাড় করাও কঠিন হয়ে পড়ে। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তার থেকে দূরে থাকে। এক সময় রুবেল চিন্তা করেন, ইয়াবা ব্যবসা করবেন। ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে তার খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তা ছাড়া যে পেশায় তিনি আছেন, ইয়াবা ব্যবসা করতে গেলে আলাদা সুবিধাও পাবেন তিনি। তিনি ধুমিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন। ধীরে ধীরে ইয়াবাসেবী  থেকে পুরোদমে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন রুবেল। গোটা থানা এলাকায়ই গড়ে তোলেন শক্তিশালী ইয়াবার সিন্ডিকেট।  সেই সঙ্গে নিজের বাসাকেও বানিয়ে ফেলেছিলেন মাদকের  মোকাম। কিন্তু তার এই সাম্রাজ্য বেশি দিন থাকেনি। ধরা পড়ে যান। নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দল রুবেলের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে ৪৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। বন্ধুর প্ররোচনায় পড়ে ইয়াবায় আসক্ত হন বেসরকারি ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শফিক। প্রথমে একটা ট্যাবলেট দিয়ে শুরু। এরপর দুই, পাঁচ, দশটা থেকে আসক্তি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে শেষ দিকে একসঙ্গে ২৫টা করে ইয়াবা নিয়ে না বসলে হতো না তার। কিন্তু এত টাকা জোগাড় করাটা তার জন্য ছিল কষ্টসাধ্য। কিছুদিন প্রাইভেট পড়ার পুরো টাকাটাই খরচ করত ইয়াবা কিনে। এরপর বাবার আলমারি থেকে না বলেই টাকা নিয়ে যেত। এরপর মায়ের আলমারি। প্রতি মাসে বাসার সামনের দোকানগুলো থেকে নগদ টাকা লোন নিত। মাস শেষে হিসাব যেত বাসায়। এরপর বাবা-মা বুঝতে পারেন শফিক কোনো নেশায় জড়িয়েছে। টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। এক সময় শফিক নিজেই কিছু টাকা জোগাড় করে কিছু ইয়াবা নিয়ে এলো। বন্ধু মহলে সেই ইয়াবা বিক্রি করে তার ভালোই চলতে লাগল। যখন বড় চালান আনতে শুরু করল ধরা পড়ে গেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। সেই শফিকের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চার দেয়ালে বন্দী।

পোশাক কারখানার স্টক লটের ব্যবসা করতেন সিরাজুল ইসলাম (৩২)। কয়েক বছর আগে তিনি সুমাইয়া সুলতানাকে (২৪) বিয়ে করেন। ভালোই চলছিল তাদের। সুখের সংসার। কিন্তু তারা ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েন। ঢাকায় পরিচয় হয় টেকনাফের দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা লোভ দেখান। খাওয়া হবে, লাভের টাকা জমাও হবে। লোভে পড়ে যায় এই দম্পতি। টেকনাফের মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবসার সুবিধার্থে এই দম্পতিকে রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া করে  দেন। টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবার চালানগুলো ঢাকায়  পৌঁছানোর পর ওই ফ্ল্যাটে রাখা হতো। সেখান থেকে রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরা এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী দোহার ও নরসিংদীতে ইয়াবা সরবরাহ করত ওই দম্পতি। এক রাতে পাঁচতলার সেই ফ্ল্যাট থেকে ওই দম্পতিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে র?্যাব। জব্দ করা হয় ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবা বড়ি, রেজিস্ট্রেশনবিহীন একটি মাইক্রোবাস, মুঠোফোন ও ৬ হাজার ২০০ টাকা। তছনছ হয় তাদের সাজানো গোছানো সংসার। 

প্রথমে ভয়ঙ্কর নেশায় আসক্ত, পরে নেশার টাকা জোগাড় করতে মাদক বিকিকিনির নিষিদ্ধ পেশায় জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রথমে শুধু নেশা করলেও পরে সেই টাকা আর জোগাড় করতে পারেন না তারা। কখনো কখনো চুরি ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়লেও সব সময় তাদের সেটা করা সম্ভব হয় না। যে কারণে তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে রাজধানীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী এক সময় সেবনকারী ছিলেন। এক পর্যায়ে তারা এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু এদের প্রত্যেকের জীবনে স্বপ্ন ছিল। বড় হওয়ার স্বপ্ন। ইয়াবায় আসক্ত ও পরে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে পুুলিশের খাতায় তারা মোস্ট ওয়ান্টেড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে তাদের ছেলেমেয়েরা ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে। এক পর্যায়ে নিষিদ্ধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। যেখান থেকে তাদের ফেরাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর