শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অভিযান চলছে মাদক আসছে

আলী আজম

অভিযান চলছে মাদক আসছে

ভাই লাগব? কয়টা? এক নাম্বারটা আছে। মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পের সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় এভাবেই হাঁকডাক দেয় মাদক বিক্রেতারা। ক্যাম্পটি রাজধানীর ইয়াবা বিক্রির সবচেয়ে বড় আখড়া। ঢাকার খুচরা ইয়াবা বিক্রেতার বড় অংশ এখান থেকেই পাইকারি রেটে ইয়াবা কিনে নিয়ে যায়। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পাওয়ায় সেবনকারীদেরও ভিড় থাকে এই ক্যাম্পে। যে কারণে ক্যাম্পের সামনের সড়ক দিয়ে চলাচল করা সাধারণ মানুষকেও ইয়াবা বিক্রেতাদের হাঁকডাকের মধ্যে পড়তে হয়। হঠাৎ হঠাৎ পুলিশের গাড়ি ওই সড়কে টহল দিলেও মাদক বিক্রেতাদের তৎপরতা বন্ধ থাকে না। পুলিশের গাড়ি কিছুটা দূরে পার্ক করা থাকে। এটি চার মাস আগের প্রতিদিনের দৃশ্য। দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর সেই বিহারি ক্যাম্পেও প্রভাব পড়ে। ক্যাম্পের সামনের সড়কের সেই হাঁকডাক নেই মাদক বিক্রেতাদের। পুলিশের  টহল বেড়েছে। আছে চেকপোস্ট। পুলিশের একটা গাড়ি সার্বক্ষণিক অবস্থান করে ক্যাম্পের সামনে। কিন্তু ওই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন গলি পথে ক্যাম্পে ঢুকলেই হতবাক হতে হয়। এ যেন মাদক বেচাকেনার হাট! ক্যাম্পের বাইরের আর ভিতরের সব বিক্রেতা একসঙ্গে বিকিকিনিতে ব্যস্ত। ক্যাম্পের প্রতি ঘরে ঘরে যেন ইয়াবার ছোট ছোট গোডাউন। মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পের এমন দৃশ্য এখন সর্বত্র। অভিযান চলছে, আবার মাদকও আসছে। সেই মাদক সেবনকারীরা কিনেও খাচ্ছে আগের মতো। মাদক বিক্রেতারা বলছে, ইয়াবা বা অন্য যে কোনো মাদক পাওয়া যাচ্ছে আগের মতোই। তবে পরিবর্তন একটা এসেছে। আগে যেখানে ১ হাজার টাকা দিতে হতো, এখন সেখানে দিতে হচ্ছে ২ হাজার টাকা। লেনদেনের এ বিষয়টি ছাড়া প্রকৃত অর্থে আর কোনো পরিবর্তন আসেনি মাদকবিরোধী অভিযানের পর। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, অনেক পরিবর্তন ঘটেছে মাদক ইস্যুতে। আগে যেখানে প্রকাশ্যে পাওয়া যেত, তা এখন গোপন হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকাসহ সারা দেশের অন্তত পাঁচ হাজার স্পটে এখন অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি চলছে। চিরচেনা রুটগুলো পরিবর্তন করে নতুন রুটে, নতুন পন্থায় মাদক আনছে। অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গ্রহীতাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে মাদক। গত মে মাস থেকে টানা অভিযান শুরু করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে পক্ষকালব্যাপী মাদকবিরোধী ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। তাদের টার্গেট সারা দেশের তিন হাজার মাদক স্পট। চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত মাদক অপরাধীদের গ্রেফতারে এ অভিযান শুরু করলেও তেমন সফলতা আসছে না। মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে আড়াই শতাধিক নিহত এবং অর্ধলাখেরও বেশি গ্রেফতার হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশের একটি প্রতিবেদনে মাদকের বেচাকেনার ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বিভিন্ন স্পটে মাদক বিক্রির তথ্য উল্লেখ রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার মুগদায় সহযোগী বাবুল মিয়াকে নিয়ে মাদকের ডিলার মোহাম্মদ দেদার মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে। তার উত্তর মাণ্ডার বটতলা মসজিদের বিপরীত পাশে ষষ্ঠতলা বিল্ডিংয়ের ছাদে নির্মিত ছোট ঘরে মাদক মজুদ রাখা হয়। পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করেন তিনি। পরিচিত মুখ ছাড়া ওই ছাদে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। পূর্ব মানিকনগরের নূরুল আমিন সরদারের অফিসে সন্ধ্যা নামলেই চলে মাদক সেবনের রমরমা আড্ডা। এই স্পটটি পরিচালনা করেন সরকার দলীয় স্থানীয় এক নেতা। একই এলাকার ৫১/১-বি নম্বর টিনশেড বাড়িতে মাদকের আসর বসে। হাতিরঝিলে মাদক ব্যবসা করছেন সালাউদ্দিন। জানা গেছে, ২১ জুলাই হাতিরঝিলে মাদকবিরোধী অভিযানে ধরা পড়েন সালাউদ্দিন। কিন্তু রাতে থানা থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একই এলাকার সোহাগ ও মানিকের রয়েছে ইয়াবা বিক্রির শক্তিশালী সিন্ডিকেট। উত্তরখানের উজামপুর নদীরঘাটে নৌকা নিয়ে ইয়াবা বিক্রি করেন জহির বেপারি। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে মতিন মিয়া। কোতোয়ালি থানা এলাকায় সক্রিয় মাদক ব্যবসায়ী হাসান। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে আল আমিন হোসেন, বংশালে মাদক ডিলার হাসান ওরফে জামাই হাসান, একই এলাকায় মাদকের ডিলার লাভলু, তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন বিপ্লব ও চায়না রাসেল। তারা সিঁড়ির গোড়া, সামসাবাদ, কসাইটুলিসহ আশপাশের এলাকায় মাদক বিক্রি করছে। তুরাগে সক্রিয় মাদক সম্রাজ্ঞী পারভীন আলম ওরফে মুক্তা। তার দুই সন্তান পারভেজ ও পাপ্পু মাদক ব্যবসায় মায়ের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এই তিনজনই পেশাদার ইয়াবা ও ফেনসিডিলের ডিলার। এ ছাড়া একই এলাকার সজিব, ড্রাইভার রাসেল ও নবী মাদক সম্রাজ্ঞী মুক্তার সহযোগী হিসেবে কাজ করে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স। অভিযান চলছে। এটি একটি চলমান ও সমন্বিত প্রক্রিয়া। মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। নিয়মিত মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা আপডেড করা হচ্ছে। তাদের আস্তানায় হানা দিয়ে তছনছ করা হচ্ছে। সবার সহযোগিতায় মাদক নির্মূল করা হবে। মাদকের সঙ্গে জড়িত কেউ রক্ষা পাবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর