বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইভ টিজিং নিয়ে মধ্যরাতে সংঘর্ষে জাবি রণক্ষেত্র

জাবি প্রতিনিধি

ইভ টিজিংয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দুটি আবাসিক হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় অর্ধশত ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় মীর মশাররফ হোসেন হল এবং আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষে ১৫ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলসংলগ্ন চৌরঙ্গী এলাকায় মীর মশাররফ হোসেন হলের ১জন এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ৩জন শিক্ষার্থী গান গাইছিলেন। এ চারজনই ৪৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। এ সময় এক নারী শিক্ষার্থী আল বেরুনী হলের তার কিছু সহপাঠীকে ডেকে এনে তাদের কাছে ওই চারজনের বিরুদ্ধে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ করেন। এ নিয়ে ওই চার শিক্ষার্থী এবং ওই নারী শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আল বেরুনী হলের শিক্ষার্থীরা ওই চারজনকে মারধর করে। এতে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্র গুরুতর হন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ভিড় করেন। এরপর রাত ১২টার সময় আল বেরুনী হলের সামনে আল বেরুনী হল ছাত্রলীগ এবং মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, উভয় গ্রুপের কর্মীরাই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলের অনুসারী। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, এ সময় মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্য থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। দুই গ্রুপের মধ্যে চলে ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি। মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৪তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থীর (খালিদ, নৃবিজ্ঞান, ৪৪তম আবর্তন) বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। সব মিলিয়ে চৌরঙ্গী, মেডিকেল সেন্টার, আল বেরুনী হল প্রাঙ্গণ, জীববিজ্ঞান অনুষদ এই পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আল বেরুনী হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় অনেক ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী হলটিতে অবস্থান করছিলেন। তারাও এই পরিস্থিতিতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এদিকে গতকাল সকাল ৮টার দিকে আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা হলের সামনের জীববিজ্ঞান অনুষদের গেটে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগ কর্মীদের বিচার দাবিতে তালা লাগিয়ে দেন। সকাল ৯টা থেকে এই ভবনে ১ম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। খবর পেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং যথাযথ বিচার করার আশ্বাস দেন। উপাচার্যের আশ্বাস পেয়ে গেটের তালা খুলে দেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। ফলে যথাসময়ে ১ম বর্ষের ভর্তিচ্ছুদের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। এসব বিষয়ে প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইনের কাছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলাবিধির লঙ্ঘন। ফৌজদারি অপরাধ। আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে সে দিকে আমরা নজর রাখছি। এখন পর্যন্ত যা ঘটেছে তার একটা সুষ্ঠু সামাধান যেন হয় সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিশ্চয়ই যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘এটি ছাত্রলীগ কেন্দ্রিক কোনো সংঘর্ষের ঘটনা নয়। সাধারণ কিছু শিক্ষার্থীর তুচ্ছ একটি ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। আমি চাইব ভবিষ্যতে আর কোনো ছাত্রলীগ কর্মী যেন এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত না করে। আর যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে শাখা ছাত্রলীগ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ঘটনার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করবে।’ সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, ‘যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা সংগঠনের আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কাজ করেছে। তাদের জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’

সর্বশেষ খবর