শিরোনাম
শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এবার ভয়ঙ্কর মমো

মির্জা মেহেদী তমাল

এবার ভয়ঙ্কর মমো

নাম মমো। দেখতে ভয়ঙ্কর। গায়ের রং ফ্যাকাশে। বাইরের দিকে প্রসারিত লাল লাল চোখ। থাকে কুিসত হাসি। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তার চেহারা বিখ্যাত হয়ে উঠেছে সারা দুনিয়ায়।

এই মমো হলো একটি অনলাইন গেম। এটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা একে তুলনা করছেন আলোচিত ভয়ঙ্কর ‘ব্লু হোয়েলে’-এর সঙ্গে। বলেছেন, ভয়াবহ এই খেলা নিয়ে যেতে পারে মারাত্মক পরিণতির দিকে। আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করা এই মমোর থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। ল্যাটিন আমেরিকায় ইতিমধ্যেই এর বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যদিও এর মধ্যেই এটি পৌঁছে গেছে এশিয়া আফ্রিকা আর ইউরোপে।

উল্লেখ্য, অনলাইন গেম ব্লু হোয়েল রাশিয়ায় শুরু হয়ে পরে ভাইরাল হয়েছিল। ‘ব্লু হোয়েলে’ আসক্ত হয়ে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যা করে। এরপর থেকে ‘ব্লু হোয়েল’ বন্ধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। ব্লু হোয়েলের পর নতুন আতঙ্কের নাম এখন ‘মমো’।

মমো কী? হুট করে এটা আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিনে ভেসে উঠতে পারে এবং গেমে অংশ নিতে প্রলুব্ধ করতে পারে। কিন্তু সেটা করলেই আপনি বোকা বনে যাবেন। ল্যাটিন আমেরিকায় কর্তৃপক্ষ জনগণকে সতর্ক করে বলেছে এ গেম মেসেজের মাধ্যমে অন্যকে না দেওয়ার জন্য কারণ তারা বলছে, এই অনলাইন গেম কাউকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। মেক্সিকোর একটি পুলিশ ইউনিট যারা অনলাইন অপরাধ নিয়ে কাজ করে। তারা বলছে, এটা শুরু হয়েছে ফেসবুকে। একদল লোক একে অন্যকে প্রলুব্ধ করে একটি অপরিচিত নম্বরে কল দেওয়ার জন্য। যদিও সেখানে একটি সতর্কতা দেওয়া ছিল। মেক্সিকোর পুলিশ বলছে, অনেক ব্যবহারকারী জানিয়েছে যে, মমোতে বার্তা পাঠানোর পর সে সহিংস ছবি পাঠাবে। অনেকে হুমকিমূলক বার্তা পেয়েছেন বা ব্যক্তিগত তথ্যও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মমো ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী-আমেরিকা থেকে ফ্রান্স কিংবা আর্জেন্টিনা থেকে নেপাল। স্পেনে পুলিশও এ ধরনের গেম উপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে নাগরিকদের। মেক্সিকোর মতো স্পেনও টুইটারে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে এবং লোকজনকে এ খেলায় অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। হ্যাশট্যাগ ইগনোর ননসেন্স দিয়ে চলছে প্রচারণা, যাতে বলা হচ্ছে ডোন্ট অ্যাড মমো টু ইওর কন্টাক্টস। কিন্তু এত সব সতর্কতা সত্ত্বেও এখনো বিভ্রান্তি রয়েছে যে, আসলে মমো কী? কোথা থেকে এর সূচনা হলো? কোথা থেকে এলো এই মমো? মমোর এমন বিস্তার নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। অনলাইন প্লাটফর্ম রেডিট বলছে তাদের সবচেয়ে পড়া হয়েছে এমন পোস্টগুলোর একটি হলো হোয়াটসঅ্যাপ বালিকা মমো কী ও কে? রেডিট বলছে, একটি ভিডিও পেয়েছি এটি সম্পর্কে এবং এটি ভীতিকর। সবচেয়ে জনপ্রিয় উত্তর ছিল, স্প্যানিশভাষী কোনো দেশ থেকে একজন ইনস্টাগ্রাম থেকে একটি ছবি নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট তৈরি করে। লোকজন সেখান থেকে একটি কন্টাক্ট নম্বর পায় ও গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে তুমি একে স্পর্শ করলে সে তোমাকে গ্রাফিক ছবি ও বার্তা দেবে। কেউ কেউ বলেন যে, আপনার সব ব্যক্তিগত তথ্যে তার প্রবেশাধিকারের সুযোগ আছে। ইউটিউবার রেইনবট যার পাঁচ লাখেরও বেশি ফলোয়ার আছে। তিনি এ বিষয়টি একিট ভিডিও পোস্ট করেন গত এগারোই জুলাই। এ ভিডিওটি দেখেছে পনেরো লাখেরও বেশি মানুষ কিন্তু তিনিও আসলে জানেন না কে এই মমোর স্রস্টা। অর্থাৎ মমো কে তৈরি করেছেন সেটি তারও জানা নেই। এখন যতটুকু জানা যাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ গেমটি জাপানের কোড সংবলিত তিনটি ফোন নম্বরের, কলম্বিয়ার কোড সংবলিত দুটি আর মেক্সিকোর কোড সংবলিত আরেকটি নম্বরের সঙ্গে সংযুক্ত। আর ছবিটি নেওয়া হয়েছে টোকিওর একটি প্রদর্শনী থেকে। যদিও এটা জানা খুবই কঠিন যে গেমটি আসলে কোথা থেকে এসেছে কিন্তু এটি এখন জানা যে ছবিটি জাপানের মমোকেই প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যবহার করা হয়। মমোর ভীত চাহনির মুখ একটি পাখি মানবীর মূর্তিকে তুলে ধরে। ২০১৬ সালে টোকিওতে ভ্যানিলা গ্যালারিতে একটি প্রদর্শনীর অংশ ছিল এটি। দুই বছর আগে আরেকটি প্রদর্শনীতে মমো ছিল বিশেষ আকর্ষণ। বহু মানুষ মমোর সঙ্গে পোজ দিয়ে ছবি তুলেছে এবং এমন বহু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত হয়েছে। মমো নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অপরিচিত কোনো নম্বরের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো আইডিয়া নয়। তবে এর বাইরেও অন্তত পাঁচটি কারণে মমো কে উপেক্ষা করা উচিত বলে মনে করে তারা। এক. ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে, দুই. সহিংসতা, এমনকি আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করতে পারে, তিন. ব্যবহারকারী হয়রানির শিকার হতে পারে, চার. ব্যবহারকারী চাঁদাবাজির শিকার হতে পারে এবং পাঁচ. ব্যবহারকারী মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অনিদ্রা জেঁকে ধরতে পারে। নতুন ‘ব্লু হোয়েল’? : মমোকে ইতিমধ্যেই অনেকে আলোচিত অনলাইন গেম ব্লু হোয়েলের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছেন। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করার দায়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় এসেছিল এটি। যদিও মমো ছড়িয়ে পড়ছে শুধু হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কিন্তু এটি শিশুদের অনলাইন গেম মাইন ক্রাফটেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্যবহারকারীদের এ ধরনের বার্তা অনুসরণ করা উচিত নয়। কোনো অপরিচিত নম্বরের সঙ্গে সংযোগ করাও বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর