শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ

অবসরের পরও ভাতা পেতে ভোগান্তি ৩০ হাজার শিক্ষকের

আকতারুজ্জামান

দিনাজপুরের বোঁচাগঞ্জ উপজেলার আটগাঁও দাখিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আবু মুসা। চাকরিজীবন শেষে কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর ভাতার জন্য আবেদন করেন ২০১৭ সালের অক্টোবরে। এরপর এক বছর পেরোতে চলল তিনি হাতে পাননি ভাতার টাকা। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবন শেষে অবসর ভাতার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তিনি। শুধু এক আবু মুসা নন, প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী চাকরিজীবন শেষ করে অবসর আর কল্যাণ ট্রাস্টের টাকার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।

শিক্ষকদের এমপিওর (মান্থলি পে-অর্ডার) ২ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হয় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিলে। আর ৪ শতাংশ কেটে রাখা হয় অবসর সুবিধা বোর্ড তহবিলে। এই টাকাই অবসরের পর পান  শিক্ষক-কর্মচারীরা। জমাকৃত এ অর্থের জন্য আবেদন করলেও তাদের অর্থ ছাড় হচ্ছে দুই থেকে তিন বছর পর। শিক্ষকদের অনেকেই মারা গেছেন অবসর ও কল্যাণের অর্থ হাতে না পেয়েই। রাজধানীর পলাশীতে অবস্থিত ব্যানবেইস ভবনে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডে গিয়ে দেখা গেছে শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের স্বজনদের দুর্দশার চিত্র। তথ্যমতে, কল্যাণ ট্রাস্টের ভাতার জন্য মোট ২৫ হাজার ৮৫৯ জন শিক্ষকের আবেদন জমা রয়েছে। আর অবসর সুবিধা বোর্ডের ভাতার জন্য আবেদন রয়েছে ২৪ হাজার ৩৫৩ জনের। দুই বোর্ড মিলে অর্ধ লক্ষাধিক আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। কল্যাণ ট্রাস্টে স্থায়ী মূলধন ও এসটিডি হিসেবে মোট জমা রয়েছে মাত্র ৩৭৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া অবসর সুবিধা বোর্ডে মূলধন রয়েছে ৫৮৯ কোটি টাকা। কিন্তু এসব আবেদন নিষ্পন্ন করতে প্রয়োজন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। তাই ভাতার অর্থ পেতে দীর্ঘ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষকদের। তবে শিক্ষকদের অবসরের পর ভাতা পেতে ভোগান্তি লাঘব করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ৭৫৭ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন। একই সঙ্গে গত বছরের জুন পর্যন্ত কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডে অনিষ্পন্ন সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, এর আওতায় প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষকের ২৮ হাজার আবেদন আগামী এক মাসের মধ্যেই নিষ্পন্ন করা হবে। তারা এক মাসের মধ্যেই অবসরের ভাতার টাকা হাতে পাবেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার শিক্ষকদের দুর্ভোগ লাঘবে এ ব্যবস্থা নিয়েছে। অবসরের পর ভাতা পেতে বিলম্বের কারণ হিসেবে শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, সর্বশেষ স্কেলে তাদের এই টাকা দিতে হয়। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ হওয়ায় বর্তমানে আগের তুলনায় দ্বিগুণ টাকাই দিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। কিন্তু ফান্ডে প্রয়োজনীয় টাকা নেই। তিনি আরও বলেন, বিএনপি শাসনামলে পাঁচ বছরে (১৯৯১-’৯৬) শিক্ষকদের কল্যাণ ভাতার চাঁদা (এমপিওর ২ শতাংশ) সংগ্রহ বন্ধ ছিল। এ কারণে একটি বড় সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঝে-মধ্যেই বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে এ সংকট সমাধানের চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি কল্যাণ ও অবসরের ফান্ডে ৭৫৭ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের কারণে শিক্ষকদের অবসরের পর ভাতা দেওয়ার পথ সুগম হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর