শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

২৪ বছরের শিক্ষকতা শেষে অবসরে ড. জাফর ইকবাল

জুবায়ের মাহমুদ, শাবি

২৪ বছরের শিক্ষকতা শেষে অবসরে ড. জাফর ইকবাল

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের চোখ দিয়ে দেশের জন্য কল্যাণকর বিভিন্ন স্বপ্ন দেখতে, দেশের তরুণ প্রজন্মদের নিয়ে সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে।  মূলত শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) সুদীর্ঘ ২৪ বছরের  শিক্ষকতা জীবন ছেড়ে অবসর জীবনে গেলেও তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য রেখে যাচ্ছেন  ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন। বুধবার অধ্যাপক তার শাবিপ্রবি’র শিক্ষক হিসেবে ছিল শেষ কর্মদিবস। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, একাধিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।  এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে মুক্ত চিন্তা ও বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ বজায় রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষকতার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও অবসরের দিনগুলো শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবেন ও বই পড়ে কাটাবেন বলে জানান তিনি। এদিকে শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক জাফর ইকবালকে ‘প্রফেসর এমিরেটাস’ হিসেবে দেখতে চাইলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। ১৯৯৪ সালের ৪ ডিসেম্বর শাবির প্রথম উপাচার্য ড. সদরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর বিশেষ অনুরোধে জাফর ইকবাল শাবিপ্রবি’র তৎকালীন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি আমেরিকার ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি শেষে বিশ্ববিখ্যাত ক্যালটেক ও বেল ল্যাবে গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। মূলত মুহম্মদ জাফর ইকবাল শাবিপ্রবিকে নিয়ে গিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়। তিনি তার ২৪ বছরের শিক্ষকতা জীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক অবদান রাখেন। এখানে তার কিছু চিত্র তুলে ধরা হল:

দেশের প্রথম ক্যাম্পাস, তারবিহীন ইন্টারনেট সংযোগ : দেশের প্রথম ক্যাম্পাস হিসেবে শাবিতে তারবিহীন ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ চালুকরণে তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন।

বাংলাভাষী প্রথম রোবট রিবো: বাংলাভাষী প্রথম রোবট রিবো তৈরির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। ‘রিবো’ ছিল বাংলাদেশে তৈরি প্রথম স্যোশাল ইন্টারেকশন রোবট যা বাংলায় কথা বলা, হাত মেলানো, চোখ ও চোখের ভ্রু নাড়াতে এবং হাত উপর নিচ করতে পারত। এছাড়া রোবটটি ডাকলে সাড়া দিত এবং নাচতেও পারত।

মনুষ্যবিহীন বিমান (ড্রোন): ড্রোন তৈরি টিমের তত্ত্বাবধানে ছিলেন শাবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এই ড্রোন দিয়ে দেশের সীমানা পাহারা দেওয়া, ওপর থেকে তাত্ক্ষণিক ছবি তোলা এবং আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন: দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন তার হাত ধরেই হয়। এই ট্র্যাকিং ডিভাইস দ্বারা শিক্ষার্থীরা তাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস কোথায় আছে তা জেনে যায়।

 মোবাইল ফোনে ভর্তি প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন: মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন জাফর ইকবাল। ২০০৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার এই প্রক্রিয়াটি চালু করেন। বর্তমানে বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করা হয়ে থাকে। এই উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ শাবি ২০১০ সালে দেশে বিদেশে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছে।

বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা: দেশের প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে জাফর ইকবালের হাত ধরেই। এটি বিশ্বের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন।

সর্বশেষ খবর