শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সার্কুলার ট্রেন আর কত দূর

১০ মাসেও শুরু করা যায়নি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, নিয়োগ হয়নি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান

নিজামুল হক বিপুল

সার্কুলার ট্রেন আর কত দূর

যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বচ্ছন্দ করার জন্য ঢাকার চারপাশে রেললাইন বসিয়ে ট্রেন চালুর (সার্কুলার ট্রেন) উদ্যোগ নেওয়া হয় গত বছর। চলতি বছরের শুরুতেই এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু গত ১০ মাসেও তা শুরু করা যায়নি। আগামী ডিসেম্বর মাসের আগে সমীক্ষার কাজই শুরু করা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগও চূড়ান্ত হয়নি সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য। তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করতে আজই রেল ভবনে একটি বৈঠক হওয়ার কথা। সার্কুলার ট্রেনের জন্য রেলপথ লাগবে প্রায় ৮১ কিলোমিটার। দীর্ঘ এই রেলপথ নির্মাণে সরকারকে বিনিয়োগ করতে হবে অন্তত ৮০ হাজার কোটি টাকা। এ জন্য বৃহৎ এই প্রকল্পে প্রয়োজন হবে বিদেশি অর্থায়ন। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ কমাতে এবং কর্মস্থলে সহজে যাতায়াত নিশ্চিত করাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্যই সার্কুলার ট্রেন চালু করা হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্পের জন্য একটি সার্ভে প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে চলতি বছরের ১৮ মার্চ ওই প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প কমিটির সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেলপথ মন্ত্রণালয়ে থেকে প্রকল্পের জন্য একটি সমীক্ষা প্রস্তাব তৈরি করে গত ২৯ জুন পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রাথমিক মূল্যায়ন সভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ডিটিসিএ, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতামত নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এই প্রকল্প সম্পর্কে ইতিবাচক মতামত পাওয়া যায়। সূত্র জানায়, প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ব্যয় হবে ৯৭২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সমীক্ষা প্রস্তাবটি গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর অনুমোদন করে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনের পর সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) বা আগ্রহ ব্যক্তকরণ আহ্বান করে। ৩ মার্চ দাখিলকৃত প্রস্তাবগুলো উন্মুক্ত করে মূল্যায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়। গত ২৩ মে পরামর্শক নিয়োগের দ্বিতীয় দফায় ইওআই আহ্বান করা হয়। এরপর ২৫ জুন তো উন্মুক্ত করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হতে আগ্রহীদের দাখিলকৃত প্রস্তাব থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কমিটি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করতে গতকাল রেলভবনে বৈঠক করে মূল্যায়ন কমিটি। প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের পরিচালক (প্রকৌশল) মনিরুল ইসলাম ফিরোজী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, গতকালের বৈঠকে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্পেন, চীন ও কোরিয়ার তিনটি প্রতিষ্ঠান পরামর্শক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের প্রস্তাবনা দাখিল করে। এখন প্রস্তাবগুলো কারিগরি মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হবে। পরবর্তীতে এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে সংশ্লিষ্টদের কাছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী দুই মাসের মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কার্যাদেশ দিতে পারবেন। যাতে ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্ভাব্য সমীক্ষা যাচাইয়ে কাজ শুরু করা যায়। প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ৮১ কিলোমিটার। রেলপথের মধ্যে থাকবে ২০টি স্টেশন। ইন্টারসেকশন থাকবে সাতটি। এগুলো করা হবে মেট্রোরেলের সঙ্গে সমন্বয় করে। তবে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে স্টেশনের সংখ্যা এবং ইন্টারসেকশনের সংখ্যাও বাড়তে পারে।

সর্বশেষ খবর