শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সোনার হরিণ নয় চোরাবালি

মির্জা মেহেদী তমাল

সোনার হরিণ নয় চোরাবালি

সংসারের আর্থিক অনটন কাটাতে মেয়েকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন ভ্যানচালক বাবা। কিন্তু সেই মেয়ে বিদেশের মাটিতে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। কুমারী মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মে মাসের প্রথম দিকে দেশে ফেরেন খালি হাতে। অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা খরচ ও তার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পরিবারটি। সামাজিকভাবেও তারা বিপর্যস্ত। মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ওই ভ্যানচালক, তার মেয়ে ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের অক্টোবরে স্থানীয় দালাল আবুল কাসেমের মাধ্যমে গৃহকর্মী হিসেবে জর্ডান যান সদ্য কৈশোর পার হওয়া মেয়েটি। যাওয়ার পর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ। মেয়েটি জানান, জর্ড়ানের রাজধানী আম্মানে বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করেছেন খাওয়া চুক্তিতে। কোনো বেতন পাননি। টেলিফোন না থাকা ও বাড়ির মোবাইল ফোনের নম্বর ভুলে যাওয়ায় কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। প্রায় ১০ মাস পর একটি মার্কেটে তার পরিচয় হয় সিংগাইরের চরচামটা গ্রামের পপি ওরফে রাবেয়ার সঙ্গে। একই এলাকার মানুষ পেয়ে মেয়েটি সবকিছু খুলে বলেন রাবেয়াকে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে রাবেয়া মেয়েটিকে তার সঙ্গে যেতে বলেন। তিনিও রাজি হয়ে যান। তাকে একটি দোতলা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিচতলায় দুটি ঘরে বাংলাদেশি, ভারতীয়, শ্রীলঙ্কার আরও প্রায় ৩০ জন মেয়ে ছিল। বাংলাদেশি মেয়েদের কাছ থেকে জানতে পারেন, তাদের দিয়ে যৌনবৃত্তি করানো হয়। রাবেয়ার মাধ্যমে খদ্দেররা যোগাযোগ করে। পছন্দের মেয়েকে খদ্দেরের কাছে পাঠিয়ে দেন রাবেয়া। এ ছাড়া বাড়ির দোতলায় দুটি ঘরে ছুটির দিনে মদের আসর বসানো হয়। সেখানেও যৌনকর্মে বাধ্য করা হয় ওই মেয়েদের।

রাবেয়া প্রায় ১৫ বছর ধরে জর্ডানে মেয়েদের দিয়ে দেহব্যবসা পরিচালনা করছেন। জর্ডানে রাবেয়ার আরেক নাম সোনিয়া। ওই বাড়িতে পৌঁছানোর দুই দিন পরই এ মেয়েটিকে এক খদ্দেরের কাছে যেতে বলেন। রাজি না হওয়ায় বেদম মারধর করা হয়। বেশ কয়েক দিন নির্যাতনের পর একপর্যায়ে তিনিও বাধ্য হয়ে রাজি হন। মেয়ের বাবা বলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করে দেননি দালাল আবুল কাসেম। এ নিয়ে আমরা সিংগাইর থানায় মামলা করলে পুলিশ কাসেমকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে কাসেম জেলহাজতে রয়েছেন। মেয়ে দেশে ফেরত আসার পর রাবেয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পারি।’ ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন হবিগঞ্জের সালমা (ছদ্মনাম)। মাত্র ১৫ দিনেই ভেঙে যায় তার সুখস্বপ্ন। গৃহকর্তার নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে চলে এসেছেন দেশে। কিন্তু দেশে এসে আরেক বিরূপ অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় এই নারীকে। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়েছে আগেই, সন্তানদেরও কাছে পাচ্ছেন না। নিজের জন্মদাতাও তাকে ফিরিয়ে নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অনিশ্চয়তায় তাই সালমার দিন কাটছে নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি একটি সংস্থার আশ্রয় কেন্দ্রে। সালমা জানান, চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে রেখে আসার কথা বললে গৃহকর্তা তা করেননি, উল্টো বেড়ে যায় নির্যাতনের মাত্রা। সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে গিয়ে সালমার মতো অনেককেই ফিরে আসতে হয়েছে গত কয়েক বছরে। তাদের মুখে এসেছে নানা ধরনের নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণের কথাও। সালমা জানান, দেশে ফেরার পর সন্তানদের কাছে ফিরতে পারছেন না, কারণ তার বাবা শামসু মিয়াই তাকে পরিবারে ঠাঁই দিচ্ছেন না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর