সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ধরন পাল্টে জটিল হচ্ছে ডেঙ্গু, ঝুঁকিতে শিশুরা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ধরন পাল্টে জটিল হচ্ছে ডেঙ্গু, ঝুঁকিতে শিশুরা

রায়হানের (ছদ্ম নাম) বয়স এক বছর সাত মাস। গত ১৩ জুলাই হঠাৎ জ্বর আসলে বাবা-মা তাকে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু চিকিৎসকের শত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে তিন দিনের মাথায় মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে সে। এ বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৭ জন। এর মধ্যে ৯ জনই শিশু। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের (এনএইচসিএমসি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৭ জন নতুন করে ভর্তি হয়েছেন। গত জুলাই থেকে ডেঙ্গুর  প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এ সময়ে সাড়ে ৫ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিক পর্যন্ত শুধু ঢাকাতেই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু এখন ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম এবং রাঙ্গামাটিতেও ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ১৬ বছরের মধ্যে এবারই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। ডেঙ্গু সাধারণত টাইপ ১, টাইপ ২, টাইপ ৩ ও টাইপ ৪-এই চার ধরনের হয়ে থাকে। এবারই প্রথম টাইপ ৩ দেখা যাচ্ছে। এর ফলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। হার্ট, কিডনিসহ মাল্টি অরগান ফেইলিউর হয়। তাই অনেক রোগী মারা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, বড়দের তুলনায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ার কারণেই তারা বেশি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এই জ্বরে ইন্টারনাল রক্তক্ষরণ অনেক বেশি হয়। শিশুরা অল্পতেই শকে চলে যাওয়ায় তাদের প্রেসার, পালস খুঁজে পাওয়া যায় না। কিডনি, লিভার ফেইলিউর শিশুদের খুব দ্রুত হয়। সে কারণে ডেঙ্গুতে শিশুদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি। এ ছাড়া ডেঙ্গুর ধরন এবার অনেক বদলে গেছে। অনেক সময় জ্বর বেশি হচ্ছে না। হঠাৎ করে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সামান্য জ্বরে অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে মৃত্যুর ঘটনাও বেশি ঘটছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর জন্য বিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি আক্রান্ত হওয়ার পর ব্যথার ওষুধ সেবন, পর্যাপ্ত পানি পান না করাও জটিলতা বাড়াচ্ছে বলে জানান তারা। ২০০০ সালে বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর সারা দেশে ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৯৩ জন। পরের বছর ২ হাজার ৪৩০ জন আক্রান্ত হলেও মারা যায় ৪৪ জন। ২০০২ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আবার বেড়ে যায়। ওই বছর ৬ হাজার ২৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং ৫৮ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত্ম মোটামুটি নিয়ন্ত্রণেই ছিল ডেঙ্গুর প্রকোপ। তবে ২০১৬ সালে এর ব্যাপকতা আবার বেড়ে যায় এবং সে বছর ৬ হাজার ৬০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ১৪ জন। ২০১৭ সালে ২ হাজার ৭৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে মারা যায় আটজন।

সর্বশেষ খবর