সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ফেরত পাঠানোর জের

শঙ্কায় ভারতে থাকা রোহিঙ্গারা

কলকাতা প্রতিনিধি

সম্প্রতি সাত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পর ভারতে অবস্থানরত ৪০ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারা কেউ মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাইছে না। রোহিঙ্গাদের আশঙ্কা, ভারত সরকার এখন জোর করে তাদের স্বদেশে পাঠিয়ে দেবে।

এ বিষয়ে দিল্লির কালিন্দি কুঞ্জশিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বলছেন, তাদের ফেরত যেতে না চাওয়ার প্রথম কারণ- প্রাণ হারানোর ভয়। দ্বিতীয়ত, নিজের দেশে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হলে সেখানে যাওয়া তাদের জন্য নিরাপদ হবে না। মুহাম্মদ ফারুক নামে এক রোহিঙ্গা  শরণার্থী বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে আমি (দিল্লির শিবির) এখানে বসবাস করছি। আমি ভারত সরকারকে অনুরোধ করব- তারা যেন এখানে থাকার সুযোগ দেয়। আমরা আমাদের দেশে (মিয়ানমার) অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। লোভে পড়ে আমরা দেশ ত্যাগ করিনি, কেউই তার নিজের দেশ ছেড়ে যেতে চায় না।’ তার আশঙ্কা, যেসব শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাদের হত্যা করা হতে পারে। ফারুক বলেন, ‘আসাম থেকে যে সাত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হলো তারা আর বেশি দিন জীবিত থাকবে না, তাদের হত্যা করা হবে- কোনো সন্দেহ নেই।’ জম্মু-কাশ্মীরের শিবিরে আশ্রয় নেওয়া কার্ডধারী রোহিঙ্গা নাগরিক সাহিদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ভারতে এসেছিলাম, কারণ লোকে আমাদের বলেছিল- এখানকার পরিস্থিতি অন্য দেশের চেয়ে ভালো। এখানে কাজের সুযোগ আছে এবং অবাধে ঘোরাফেরা করা যায়।’ বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও চার সন্তানের সংসারে সাহিদুল্লাই একমাত্র উপার্জনকারী। তিনি জম্মু শহরে একটি গাড়ির গ্যারেজে ধোয়ামোছার কাজ করেন। বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা একটি ঘরের মেঝেতে বসে তিনি আরও বলেন, ‘এই দেশে থাকতে দেওয়ায় আমি ভারতকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে ঘৃণাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে।’ ২৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গা যুবক মুহাম্মদ আরাফাত জানান, স্থানীয় মানুষেরা প্রায় কোনোরকম প্রমাণ ছাড়াই তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি যোগসাজশের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের এখান থেকে উঠে যেতে বলে। ফলে আমার পুরো পরিবার খুবই শঙ্কায় রয়েছে। আসলে প্রত্যেকেই প্রত্যাবসানের ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।’ দিল্লির শাহীনবাগ রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মুহাম্মদ হারুন (৪৭) বলেন, ‘আমরা ভারত ছেড়ে অন্যত্র যেতে চাই না। এ দেশে অন্য দেশের অনেক উদ্বাস্তু রয়েছে। তবে আমাদেরই কেন টার্গেট করা হবে? আমাদেরই কেন কারাগারে প্রেরণ করা হবে? এর একটাই কারণ, তা হলো-আমরা মুসলিম নাগরিক। তারা অন্য উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে এই মনোভাব দেখায় না।’

সর্বশেষ খবর