শিরোনাম
বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফাঁসালেন তো ফাঁসলেন

মির্জা মেহেদী তমাল

ফাঁসালেন তো ফাঁসলেন

গত ২৭ মে বোয়ালখালী থানা পুলিশ শিক্ষানবিস আইনজীবী সমর চৌধুরীকে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি এলাকা থেকে আটক করে। এরপর তাকে গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। তার গ্রামের বাড়ি থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করে পুলিশ বোয়ালখালী থানায় দুটি মামলা করে। শুধু মামলা নয়, তার হাতে অস্ত্র দিয়ে ছবি তুলে গণমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। সমর চৌধুরী থাকেন শহরে আর অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করলেন তার গ্রামের বাড়ির ঘরের বিছানার নিচ থেকে। আর এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় সমর চৌধুরীকে। গ্রেফতারের পর থেকে সমরের পরিবারের দাবি, তাদের গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী যুবক সঞ্জয় দাশের সঙ্গে তার প্রতিবেশী স্বপন দাশের জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ আছে। স্বপন দাশকে আইনি পরামর্শ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সঞ্জয় দাশ পুলিশকে ব্যবহার করে সমরকে দুটি মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। এই গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় ওঠে। প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা। ওসি হিমাংসু সমর চৌধুরীর বাড়ি সারোয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদে একটি সভায় গিয়ে গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন। গত ২ জুলাই সমরের মেয়ে অলকানন্দা চৌধুরী ও তমালিকা চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে তার বাবার মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এরপর ১২ জুলাই সমর জামিনেমুক্তি পান। জামিনে মুক্ত হয়ে সমর গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, গ্রেফতারের পর পুলিশ তাকে ক্রসফায়ারে দিতে চেয়েছিল। সমরকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে বিতর্কে পড়া ডিআইজি মনিরুজ্জামানকে গত জুলাইয়ে বদলি করা হয়। আবুল হাশেম নামের এক নিরপরাধ যুবককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টাকালে জনতার হাতে ধরা পড়েন মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার এএসআই মানিকুজ্জামান মানিক ও কনস্টেবল আজম। পরে এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর তাদের স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় উদ্ধার করে নিয়ে যায় সিংগাইর থানা পুলিশ। উপজেলার ছোট কালিয়াকৈর নতুন বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, ছোট কালিয়াকৈর গ্রামের বীরবলের ছেলে আবুল হাশেম স্থানীয় বাজারে একটি কসমেটিকসের দোকানের সামনে বসা ছিলেন। এমন সময় সাদা পোশাকে সিংগাইর থানার এএসআই মানিকুজ্জামান মানিক ও কনস্টেবল আজম কথা আছে বলে তাকে ডেকে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যান। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই এএসআই মানিক দুটি ইয়াবা বড়ি হাশেমের পকেটে ঢুকিয়ে হাতে হাতকড়া পরিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এমন দৃশ্য দেখে বাজারের ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় ৫ শতাধিক মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এএসআই মানিক ও পুলিশ সদস্য আজমকে প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। একপর্যায়ে ওই দুই পুলিশ সদস্য ইয়াবা নাটকের কথা স্বীকার করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ছেলেটি নিরীহ প্রকৃতির। সে বিড়ি-সিগারেটও খায় না। বিষয়টি থানার ওসিকে জানালে ঘটনাস্থলে আসেন তিনি। পরে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি তাদের নিয়ে যান।’ ভুক্তভোগী আবুল হাশেম বলেন, হঠাৎ ওই দুই পুলিশ এসে তাকে ধরে টানাটানি করে। একপর্যায়ে তার পকেটে জোর করে কী যেন ঢুকিয়ে দেয়। এরপর বলে, পকেটে দুটি ইয়াবা পাওয়া গেছে। তিনি এর প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসী এসে তাদের ঘেরাও করে রাখে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় মানিকগঞ্জের আবুল হাশেম রক্ষা পান। আর চট্টগ্রামের সমর রক্ষা পেয়েছেন সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের কারণে। কিন্তু সারা দেশেই একশ্রেণির পুলিশ এমন অপরাধ করেই যাচ্ছে। পকেটে মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে গ্রেফতার করছে সাধারণ মানুষকে। পুলিশ জানিয়েছে, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলেই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর