বুধবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কাজে লাগাতে হবে সমুদ্র সম্পদ

—প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের জনগণের ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌপরিবহন খাতে দক্ষিণ এশিয়ায় রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। এ খাতকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রভূত অবদান রাখা সম্ভব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকালে রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোডে লা মেরিডিয়ান হোটেলে দ্বিতীয় সাউথ এশিয়া মেরিটাইম অ্যান্ড লজিস্টিক ফোরাম, ২০১৮-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের নিজের দেশ নিয়ে ভাবি না, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সঙ্গে একটা যোগাযোগ রক্ষা করে আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ অঞ্চলের সব মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের ওপর সব থেকে  বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’ খবর বাসসের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদ-নদী ও নৌযান উন্নয়নে এবং মানুষ ও পণ্য পরিবহনে নদ-নদীর নাব্য রক্ষা, নদ-নদীর মাধ্যমে জলাধার সৃষ্টি ও নিরাপদ নদীপথ উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নাব্য রক্ষার জন্য নদ-নদীগুলোয় ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নৌপরিবহনব্যবস্থা মূল্য ও জ্বালানিসাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনব্যবস্থাকে যৌক্তিক ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবহনমাধ্যম হিসেবে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। এজন্য আমরা বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌরুটগুলো চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি।’ সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) সনদ স্বাক্ষরকারী দেশ। ‘আইএমও ২০২০’-এর অর্থ হচ্ছে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সামুদ্রিক জাহাজগুলোয় বিদ্যমান ৩ দশমিক ৫ শতাংশ সালফারযুক্ত জ্বালানির পরিবর্তে ০ দশমিক ৫ শতাংশ সালফারযুক্ত জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ, শিল্প ও পরিবহন খাতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে শুরু করেছি এবং নৌপরিবহনব্যবস্থায়ও তা অনুসরণ করা হচ্ছে।’ শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের জন্য একটি আধুনিক, দক্ষ ও পরিবেশবান্ধব পরিবহনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে। ‘এ ক্ষেত্রে সীমিত কার্বন নির্গমন কৌশলই হবে আমাদের মৌলিক বিবেচ্য বিষয়।’ শিপিং খাতে নতুন নতুন প্রযুক্তি সন্নিবেশনের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, শ্রীলঙ্কার কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কনফারেন্স ইভেন্টস ও ভারতের গেটওয়ে মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড যৌথভাবে দুই দিনব্যাপী এ কনফারেন্সের আয়োজন করেছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ভারতের সড়ক ও নৌপরিবহনমন্ত্রী মানসুখ মান্দাভিয়া, শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল পলিটিক্স অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. হর্ষ ডি সিলভা, ইন্ডিয়া গেটওয়ে মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের এডিটর ইন চিফ রাম প্রসাদ রবি ও বাংলাদেশের নৌপরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশের নৌপরিবহন খাত নিয়ে অনুষ্ঠানে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও পরিবেশিত হয়।

সুদূর প্রাচীনকালে এ দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় ইদানীং জাহাজশিল্প নতুন রূপে আশার আলো দেখাতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে নির্মিত পণ্য ও যাত্রীবাহী জাহাজ এখন ডেনমার্ক, জার্মানি পোল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

তিনি এক পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে বলেন, নৌপথে ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট আমদানি-রপ্তানি ছিল ৪৩ দশমিক ১৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন; যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৩ দশমিক ২১ মিলিয়ন মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার নৌপথের দীর্ঘমেয়াদি নাব্য বৃদ্ধি, নদীবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন, নতুন বন্দর নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোগুলোয় জাহাজ ও যাত্রী ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং সব নৌযানের দক্ষতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেবে।

প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশ-বিদেশে কনটেইনার পরিবহনের উন্নয়ন, ড্রেজিং কার্যক্রম ও ফেরি সার্ভিসের সম্প্রসারণ, বন্দর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনার উল্লেখ করে বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। ইতিমধ্যেই বিদ্যমান ভূমি ও পানিসম্পদের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে আমরা নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রস্তুত করেছি এবং ইতিমধ্যে এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা প্রাপ্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ওপর বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সমুদ্রসীমার ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ৩৫৪ নটিক্যাল মাইলেরও বেশি সমুদ্র তলদেশের সম্পদ রয়েছে। সমুদ্রগর্ভ থেকে যে পরিমাণ সম্পদ আহরণ করা যাবে তা বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ড হতে আহরিত সম্পদের ৮১ ভাগ।

তাঁর সরকারের আমলে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা আনয়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, স্যানিটেশন, সুপেয় পানির প্রাপ্যতাসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং জাতিসংঘ ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সনদ দিয়েছে।

তিনি বলেন, প্রায় এক দশক ধরে গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে; যা গত বছর ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০১৮ সালে ২১ দশমিক ৮ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৫১ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

শেখ হাসিনা এ সময় তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’

সর্বশেষ খবর