শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নৈরাজ্য লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির

নির্ধারিত সময় পার হলেও হয় না মেরামত

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নৈরাজ্য লক্কড়ঝক্কড় গাড়ির

রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে বনানীমুখী সড়কে সারি সারি বিভিন্ন কোম্পানির বাস দাঁড়ানো। সামনে যাওয়ার জন্য একটির পেছনে ধাক্কা দিচ্ছে আরেকটি। রাইদা পরিবহনের একটি বাস পেছন থেকে ধাক্কা দিচ্ছে প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাসকে। প্রজাপতি পরিবহনের এ বাসটির গায়ে ঘষা লেগে প্রজাপতির সব রঙ উঠে গেছে। জানালার গ্লাস অর্ধেকই ভাঙা। এমনকি গাড়ির গায়ে লেখা নামের অর্ধেক পর্যন্ত উঠে গেছে। পেছনের রাইদা পরিবহনেরও একই অবস্থা। পেছনের অংশ ভেঙে ঝুলে আছে। একই অবস্থা এই সারিতে দাঁড়ানো তেঁতুলিয়া পরিবহন, বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্ট পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির গাড়ির। ভাঙাচোরা ও লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলোতেই চলছে যাত্রী পরিবহন।

৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজধানীর রাস্তায় ঝকঝকে গাড়ি নামানোর সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এখনো সড়কজুড়ে আগের মতোই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লক্কড়-ঝক্কড় এসব গাড়ি। কিছু কোম্পানি গাড়ির রং করে রাস্তায় নামালেও অধিকাংশের অবস্থা আগের মতোই। এ ব্যাপারে ঢাকার ট্রাফিক (উত্তর) পুলিশের উপ-কমিশনার প্রবীর কুমার রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভাঙাচোরা, ফিটনেসবিহীন, ঘষা লেগে রঙ ওঠা ও লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। প্রতিদিনই ট্রাফিক পুলিশ এসব গাড়ি রাস্তায় নামলেই আটক করে মামলা করছে। আমাদের এ কর্মসূচি চলছে।’

সরেজমিন বাড্ডায় দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গী যাতায়াতকারী তুরাগ পরিবহনের একটি বাসের পেছনের স্টিলের অংশের বেশকিছু জায়গা ভেঙে সরে গেছে। পেছনের ও জানালার অধিকাংশ গ্লাস ভাঙা। বাসের হাতল এবড়ো-থেবড়ো। বাসের গায়ে রঙের কোনো চিহ্ন নেই। কোনোমতে নামটা শুধু বোঝা যাচ্ছে। বাসের হেডলাইট হোল্ডারসহ ভেঙে উঠে গেছে।

কুণ্ডলী পাকানো কালো ধোঁয়া ছেড়ে এই লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো সবসময় প্রায় অন্য বাসের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে ব্যস্ত থাকে। সামনের বাসকে ওভারটেক করে মাঝরাস্তায় যাত্রী তুলতে দেখা যায় বাসটিকে। একই অবস্থা আজিমপুর থেকে বিমানবন্দর রোডে চলাচলকারী ভিআইপি ২৭ পরিবহন ও ভিআইপি ৩৭ পরিবহনের। এ বাসগুলোর সামনের অংশ থেকে শুরু করে প্রায় পুরোটারই রং উঠে গেছে। বেঁধে দেওয়া সময়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাস্তায় চলাচল করছে এ বাসগুলো। লুকিং গ্লাস, জানালার গ্লাস অধিকাংশই ভাঙা।

গাজীপুর থেকে গুলিস্তান যাতায়াতকারী গাজীপুর পরিবহনের একটি গাড়িতে দেখা যায় শুধু গ্লাস নয়, জানালার লোহার অংশও বেঁকে বের হয়ে আসছে। গাড়ির বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে নির্বাচনী ব্যানার-পোস্টার। এ ছাড়া আছে ঝালমুড়ির বিজ্ঞাপনও। গাড়িজুড়ে বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে রাজধানীতে চলতে দেখা যায় সুপ্রভাত সিটিং সার্ভিসের বাসগুলোকে। কিছু গাড়ি নতুন রং করা হলেও অধিকাংশের অবস্থাই জরাজীর্ণ।

অভিযান, আন্দোলন, আলোচনা চলমান থাকলেও পুরনো পথেই চলছে গণপরিবহন। শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা দিলেও কার্যত আসেনি কোনো ব্যবস্থা। রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে ও নামিয়ে দিচ্ছে তারা। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বাস স্টপেজ নির্ধারণ করে দিলেও সেখানে দাঁড়ায় না গাড়ি। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।

গত রবিবার বিকাল ৪টা। শাহবাগ মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট পার হয়ে যাত্রীছাউনিসহ আশপাশে দাঁড়িয়ে আছেন ৫০-৬০ জন যাত্রী। বিভিন্ন গন্তব্যের বাসের জন্য আধা ঘণ্টার বেশি সময় তারা দাঁড়িয়ে থাকলেও যাত্রীছাউনিতে দাঁড়াচ্ছে না গাড়ি। মাঝখানে কোনো গাড়ি কিছুটা গতি কমিয়ে যাত্রী উঠতে না উঠতেই ছেড়ে দিচ্ছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাসে উঠতে না পেরে বিরক্ত হয়ে মাঝবয়সী এক নারী রাস্তায় দাঁড়ানো এক বাসে উঠতে চেষ্টা করেন। তিনি হাতল ধরে ওঠার চেষ্টা করতেই ছেড়ে দেয় বাস। গতির সঙ্গে শক্তিতে না পেরে রাস্তায় পড়ে যান তিনি। এ দৃশ্য দেখে দূরে দাঁড়ানো ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য এই রাস্তার গাড়িগুলোকে সিগন্যালে থামিয়ে দেন। এতে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান ওই নারী। এভাবে প্রতিনিয়ত জীবন হাতে নিয়ে চলাচল করছে রাজধানীবাসী। এ ব্যাপারে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা পরিবহন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গাড়ি নতুন করে রং করার জন্য তাদের বহুবার জানানো হয়েছে। এখনো যেসব কোম্পানি গাড়ি রং না করে রাস্তায় নামাচ্ছে তাদের খুঁজে বের করতে আমরা মাঠে রয়েছি।’

সর্বশেষ খবর