শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নিষিদ্ধ তবুও চলছে লেগুনা

রুট পারমিট নেই, তবু মূল সড়কে চলে; চালকের অধিকাংশই লাইসেন্সহীন ও শিশু

জিন্নাতুন নূর

নিষিদ্ধ তবুও চলছে লেগুনা

রাজধানী ঢাকার সড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে লেগুনা। রুট পারমিট না থাকলেও নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে, বিশেষ করে পাড়া-মহল্লার স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার জন্য লেগুনা চালকরা যাত্রী বহন করছেন। আর এই চালকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই শিশু। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সম্প্রতি লেগুনা চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু লেগুনা মালিকদের সিন্ডিকেট নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই সড়কে লেগুনা নামাচ্ছেন। এমনকি ট্রাফিক পুলিশের সামনেই নির্বিকারে যাত্রীসহ লেগুনা চালাচ্ছেন এর চালক। এই চালকদের যানবাহন চালানোর লাইসেন্সও নেই।

বিভিন্ন রুটের লেগুনা মালিকরা জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডিএমপি কমিশনার ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে তারা আবারও লেগুনা চালাচ্ছেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় এনে ঢাকায় কেবল সংযোগ সড়কে এসব যান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞার পর রাজধানীর ফার্মগেট-জিগাতলা, মিরপুর ৬০ ফুট, মোহাম্মদপুর, কচুক্ষেত, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান-গোড়ান, খিলগাঁও, মিরপুর ১০ ও ১৪ নম্বর ও হাজারীবাগে লেগুনা চলাচল বন্ধ থাকলেও এখন রাজধানীর সংযোগ সড়ক হয়ে এ যানগুলো প্রধান সড়কেও চলাচল করছে। সরেজমিন ঘুরে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে প্রশিকা হয়ে মিরপুর এক নম্বর, মিরপুর ৬০ ফুট সড়ক এবং ইসিবি চত্বর, ভাসানটেক বাজার থেকে মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় লেগুনা চলাচল করতে দেখা যায়। এর মধ্যে ইসিবি চত্বর মোড়ে দাঁড়িয়ে দেখা যায় যাত্রী পরিবহনের জন্য ১৫টি লেগুনা সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে।

একটিতে যাত্রী পূর্ণ হলেই আরেকটিতে যাত্রী তুলছে লেগুনার কিশোর হেলপার। দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি লেগুনায় আবার চালকও কিশোর। রমিজ আলী নামের এক লেগুনা চালক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মালিকরা ‘ম্যানেজ’ করেই এসব যান চালাচ্ছেন। এ সময় ইসিবি চত্বর মোড় থেকে অল্প দূরত্বে দায়িত্ব পালনরত কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশকে দেখা যায়। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনেই চলছে লেগুনা। কথা হলে পায়রা কোম্পানির এক লেগুনা চালক বলেন, ‘নিষেধ থাকার জন্য আমরা এহন মেইন রোডে গাড়ি চালাইতাছি না, পাড়া-মহল্লার ভিতরে যাত্রী তুলতাছি।’ তিনি আরও জানান, ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর ১৪ নম্বর পর্যন্ত এখন ৩০টির বেশি লেগুনা চলছে। আর এই লেগুনাগুলোর মালিকের সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয়জন। এই এলাকায় মো. আকাশ নামে এক ব্যক্তিরই আছে ১০টির অধিক লেগুনা। এ ছাড়া মিরপুর ১ নম্বর ও মিরপুর ৬০ ফুট সড়কেও এ দিন লেগুনা চলাচল করতে দেখা যায়। নিম্ন আয়ের মানুষ, গার্মেন্ট শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের বেশি লেগুনায় চড়তে দেখা যায়।  উল্লেখ্য, গত মাসে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সড়কে বিশৃঙ্খলা রোধের জন্য লেগুনা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন। যদিও ডিএমপির পক্ষ থেকে শহরের উপকণ্ঠে এসব যান চলাচল কোনো বাধা নেই বলে জানানো হয়। কিন্তু খোদ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও পাড়া-মহল্লায় লেগুনায় যাত্রী বহন করা হচ্ছে। ডিএমপির মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রুহুল আমিন সাগর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মিরপুর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে স্বল্প দূরত্বে অনেক রুটে চলাচলের জন্য কোনো বাস-মিনিবাস নেই। এজন্য যাত্রী বহনে এখনো অনেক এলাকায় লেগুনা ব্যবহূত হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় লেগুনা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আশা করছি একে একে অন্য এলাকাগুলোতেও লেগুনা চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর