শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি

লালমনিরহাটে আগাম ধানে কৃষকের মুখে হাসি

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটে আগাম ধানে কৃষকের মুখে হাসি

এক সময় উত্তরাঞ্চলের মানুষকে মঙ্গা এলাকার মানুষ বলা হতো। আশ্বিন ও কার্তিক মাসে মানুষের তেমন কোনো কাজকর্ম ছিল না। ফলে বাড়িতে বসে অলস সময় পার কারত শ্রমজীবী মানুষ। আশ্বিন-কার্তিক মাসে মানুষের যে অভাব-অনটন ছিল তাকে বলা হতো ‘মঙ্গা’। তবে এখন আর এই অঞ্চলে ‘মঙ্গা’ শব্দটি নেই। সরকারি প্রচেষ্টা আর প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তা বদলে গেছে।  উত্তর জনপদের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। পশ্চিমে তিস্তা নদী আর পূর্বে ভারতীয় সীমান্তের মাঝখানে অবস্থিত লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা। আশ্বিন মাসের শুরু থেকে হাতীবান্ধায় কাটা শুরু হয়েছে আগাম জাতের পাকা ধান। সেই আগাম জাতের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছে কৃষক। তাদের মুখে ফুটছে হাসি। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। আশ্বিনেই যেন নবান্নের সাড়া পড়েছে ঘরে ঘরে। ধান কাটার পর আবার সেই জমিতে আলু, শাক, সবজি আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষকরা। রোগবালাই কম, একই জমিতে বছরে তিন থেকে চার ফসল আবাদ, ধানের দাম ও গো-খাদ্য হিসেবে খড়েরও দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক।

আষাঢ় মাসের শুরুতেই অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে এ জাতের ধানের চারা লাগানো হয়। চারার বয়স ২৫ দিন হলে জমিতে রোপণ করা হয়। রোপণের ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে ধান পাকা শুরু হয়। সেই ধান ৯০-১১০ দিনের মধ্যে কেটে ঘরে তোলা হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত আগাম জাতের ধানগুলো হলো— বিনা-৭, ব্রি-৩৩, ব্রি-৫৬, ব্রি-৬২, পূর্বাচী ও হাইব্রিড। হাতীবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমি। আর অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমি। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। তবে গত বছর অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমি। এ বছর আগাম জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে, ১ হাজার ৮২৮ হেক্টর জমিতে। কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি গত বছর দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান আবাদ করেছিলাম। ফলন ভালো পাওয়ায় এ বছর সাত বিঘাতে আগাম জাতের ধান আবাদ করেছি। এর মধ্যে ৮০ শতক জমির ধান ইতিমধ্যে কাটা হয়েছে। এতে ৩৭ মণ ধান হয়েছে। সিন্দুর্না চরের কৃষক এরশাদ হোসেন জানান, মঙ্গার দিনে এ ধানটি কৃষকের ঘরে আনন্দ বয়ে এনেছে। ধানের ফলনও ভালো। প্রতি বিঘা জমিতে ধান ফলেছে ১১ থেকে ১২ মণ। বাজারে দামও ভালো। প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা। এ ছাড়া গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতি বিঘা জমি থেকে খড় বিক্রি করে পেয়েছি দুই হাজার টাকা। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, দিন দিন কৃষক আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমরা এই জাতের ধান উৎপাদনে কৃষককে বিভিন্নভাবে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। আগাম জাতের ধান চাষ হওয়ায় বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এ ধান বিঘাপ্রতি ১৪ থেকে ১৫ মণ হয়। ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে কেটে ঘরে তোলা যায়।

সর্বশেষ খবর