সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাহাড় ও দেয়ালধসে শিশুসহ নিহত ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

পাহাড় ও দেয়ালধসে শিশুসহ নিহত ৪

ভারি বর্ষণে চট্টগ্রামের দুই জায়গায় পাহাড় ও দেয়ালধসে মহিলা-শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত ২টার দিকে পাহাড়ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া রাত ১টার দিকে দেয়ালধসে নিহত হন আরেকজন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা লাশগুলো উদ্ধার করেছে।

পাহাড়ধস ঘটেছে আকবর শাহ থানা এলাকার পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনির এক নম্বর ঝিল এলাকার বরিশাল ঘোনায় এবং দেয়ালধস হয়েছে পাঁচলাইশ থানাধীন রহমাননগর এলাকায়। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক কামাল উদ্দিন বলেন, টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে ফিরোজ শাহ কলোনির দুটি কাঁচাঘরের ওপর পড়লে তিনজন মাটিচাপা পড়েন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু করেন। ভোরের দিকে মাটি সরিয়ে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত তিনজন হলেন স্থানীয় নূর মোহাম্মদের স্ত্রী নূরজাহান (৪৫), তাদের আড়াই বছরের শিশুকন্যা ফজরুন্নেছা ওরফে নূর বানু এবং নূরজাহানের মা বিবি জোহরা (৬৫)। নূর মোহাম্মদের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার শান্তির হাটে, আর বিবি জোহরার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানীগঞ্জে। নূর মোহাম্মদ জানান, টানা বৃষ্টি হওয়ায় বিপদ আঁচ করতে পেরে তিনি রাতে ঘরের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছিলেন। সব শেষে পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু তার আগেই পাহাড় থেকে মাটির বিশাল স্তর ভেঙে পড়ে ঘরের ওপর। এতে তার স্ত্রী, শিশুকন্যা ও শাশুড়িসহ তিনজনের মৃত্যু হয়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, ‘ঝুঁকি বিবেচনায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তারা সরেনি। নগরীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশের বাসিন্দাদের সরে যেতে নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযানও পরিচালনা করেন। অভিযানের মুখে কেউ কেউ সরলেও ঝুঁকিতে থেকে যান অন্য বাসিন্দারা। ফলে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।’ উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল হক জসিম বলেন, ‘রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়টি এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনকর্ড গ্রুপের অধীনে। পাহাড়ের পাদদেশে এবং খাঁজে পাহাড় কেটে অবৈধভাবে অনেকেই বসতি গড়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সরে যেতে বলা হলেও তারা সরেনি। স্থানীয় বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হলে অনেকে সরলেও রাতে পুনরায় ঘরে ফিরে আসে।’ এ ছাড়া পাঁচলাইশে দেয়ালধসের ঘটনায় নিহত নুরুন্নবী নান্টু (৪৫) একজন রিকশাচালক। তার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। চট্টগ্রামে রহমাননগরের হিলভিউ আবাসিক এলাকার পাশে একটি ভাড়া ঘরে থাকতেন তিনি। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে পাহাড়ের ঢালে থাকা একটি গাছ উপড়ে গেলে সেটি সীমানা দেয়ালের ওপর পড়ে। তখন ওই দেয়াল ভেঙে ঘরের ওপর পড়ে। এতে গুরুতর আহত নান্টুকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাহাড় ও দেয়ালধসে নিহতদের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে যারা পাহাড় কেটে বসতি তৈরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর