সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভাইবোন সিন্ডিকেট

মির্জা মেহেদী তমাল

ভাইবোন সিন্ডিকেট

ওরা ভাইবোন সিন্ডিকেট। ভাই থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে, বোন বাংলাদেশে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাসীদের প্রলোভন দেখান ভাই। খুব সহজেই তিনি আমেরিকা, কানাডা পাঠাতে পারবেন। প্রলোভনে পড়ে যান বাংলাদেশিরা। এরপর তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন। ভাইয়ের দায়িত্ব শেষ । এবার বোনের কাজ শুরু। দেশে এসে প্রবাসীরা বোনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। ভাইয়ের চেয়ে বোন এক ধাপ এগিয়ে। খুব সহজেই বোন তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা বনে যান। সারা জীবনের আয় রোজগার সম্পদ হারিয়ে পথে বসে যায় বিদেশ ফেরত বাংলাদেশিরা। এমন একটি সিন্ডিকেটের সন্ধান পায় পুলিশের দল। প্রবাসীর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সিন্ডিকেটের বোনকে আটক করে। পুলিশ জানতে পারে তাদের অভিনব প্রতারণার কৌশল। পুলিশ জানায়, দুই ভাইবোনের এ সিন্ডিকেট লোকজনকে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণা করে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, তারা একটি সংঘবদ্ধচক্র।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মনিকা নামে এক তরুণীন বিদেশে লোক পাঠানোর নামে একটি প্রতারকচক্র গড়ে  তোলে। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে তার সৌদি প্রবাসী ভাই ইমরান। এ ছাড়া ঢাকায় তার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। মূলত সৌদি আরব থেকে ইমরান এবং ঢাকার সহযোগীরা তাকে বিদেশ গমনেচ্ছু  লোকজনের সন্ধান দেয়। মনিকা নিজের প্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিলেও কোনো গ্রাহককে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে যায় না। পল্টন এলাকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে বসে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যোগাযোগের মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দেয়। এমনকি ঘন ঘন বাসাও পাল্টিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় মনিকা।

তাদের কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছেন সৌদি প্রবাসী মামুন। তিনি সৌদি আরবে চাকরি করতেন। এর সুবাদে ইমরান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ইমরান তাকে তার বোন ঢাকাস্থ কানাডিয়ান দূতাবাসে চাকরি করে বলে জানায়। ইমরান মামুনকে সৌদি আরব  থেকে কানাডায় যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে। এই প্রলোভনে পা দিয়ে সৌদি আরব থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন মামুন। ইমরানের কথামতো ঢাকায় এসে তার বোন মনিকার সঙ্গে দেখা করেন। মনিকা তাকে পল্টন এলাকায় অফিস আছে জানিয়ে  ডেকে নিলেও একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। মনিকা তাকে কানাডার ভিসা করিয়ে দেওয়াসহ পাঁচ বছরের ওয়ার্ক পারমিট করিয়ে দেবে বলেও জানান। মনিকা প্রথমে তার কাছ থেকে পাসপোর্ট নেয় এবং পরবর্তী সময়ে দ্রুত তাকে টাকা দিতে বলে।

গত বছরের নভেম্বরে মনিকা তাকে জানায় কানাডা যাওয়ার জন্য তার সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। এখন শুধু টাকা জমা দিলেই ভিসাসহ পাসপোর্ট তার হাতে দেওয়া হবে। মনিকার কথামতো মামুন কয়েক দফায় তাকে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট তারিখে ভিসা ও ফ্লাইট না হলে মামুন মনিকার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে টালবাহানা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে মনিকাকে ভিসা ও পাসপোর্টের জন্য চাপ দিলে সে ভিসা সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র দেয়। কিন্তু মামুন ঢাকার কানাডিয়ান দূতাবাসে গিয়ে জানতে পারেন, মনিকা  যেসব কাগজপত্র দিয়েছে তার সবকিছুই জালিয়াতি করে  তৈরি করা। তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারণার ফাঁদে তিনি পা দিয়েছেন। পুলিশ জানতে পারে, শুরু থেকেই তারা ভাইবোন মিলে পরিকল্পনা করে মামুনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন ততক্ষণে মনিকা আত্মগোপনে চলে গেছেন। ৭-৮ বছর সৌদি আরবে থেকে মামুন টাকা জমিয়ে ঢাকার বসিলায় দেড় কাঠা জমি কিনেছিলেন। কানাডায় যাওয়ার প্রলোভনে পড়ে সেই জমি কম দামে বিক্রি করে মনিকার হাতে টাকা তুলে  দেন। এ ছাড়া, নিজের কাছে জমানো টাকা এবং ধারদেনা করে মোট ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। প্রতারণার শিকার হয়ে এখন তাকে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর