সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অনিয়মে ভর করে চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

আকতারুজ্জামান

রীতিমতো অনিয়মে ভর করে চলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এর মধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই। মাসের পর মাস বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে শীর্ষ কর্তাব্যক্তি ছাড়াই। অভিযোগ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সার্টিফিকেট বাণিজ্য, মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ক্যাম্পাস পরিচালনা, অননুমোদিত ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাসহ নানা অনিয়ম চলছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলছেন, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই সরকারি আইনের তোয়াক্কা করছে না। তারা অনিয়মকেই নিয়ম বলে ধরে নিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অনিয়ম করলেও ইউজিসি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। ভারতসহ অন্যান্য দেশের ইউজিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হলেও এ দেশের ইউজিসির বিদ্যমান আইনে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাই এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয় শিক্ষা মন্ত্র্রণালয়ের কাছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর দেওয়া এক পত্রে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ জানিয়েছে, আমেরিকা-বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট বিক্রি হচ্ছে, এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ও বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্রের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে জানতেও চাওয়া হয়েছে। ইউজিসি সূত্র জানায়, ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দুই ভাগে বিভক্ত। এরা একে অন্যের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা করেছে। আমেরিকা-বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে (৫৪/১ প্রগতি সরণি, নর্দ্দা-বারিধারা, ঢাকা) শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান নেই। দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা ২০০৬ সালের অক্টোবরে সরকার বন্ধ ঘোষণা করলেও রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রায় গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে কিনা, তা জানতে সরেজমিন পরিদর্শন করতে ইউজিসি একটি পত্র পাঠায়। এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউজিসির পত্রের বিরুদ্ধেও হাই কোর্টে রিট করেছে। অনুরূপভাবে সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চট্টগ্রামের মেহেদীবাগ ও শহীদ মির্জা লেন ছাড়া অন্য ক্যাম্পাস অবৈধ। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন। স্থগিতাদেশ নিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ, এমবিবিএস, বিডিএস, ফিজিওথেরাপিসহ ছয়টি কোর্স পরিচালিত হচ্ছে বলেও ইউজিসি জানিয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই অবকাঠামোগত সুবিধা নেই, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তারা অননুমোদিত কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের মেম্বারদের সিটিং অ্যালাউন্সের নামে মোটা অঙ্কের অর্থসুবিধা দেওয়া হয়। ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এত বেশি টাকা আদায় করে যে, সেই টাকা দিয়ে অনায়াসে দুজন শিক্ষার্থী পড়তে পারে। কিন্তু তারা বিভিন্ন নামে এই টাকা আদায় করে। শিক্ষার পেছনে তারা অর্থ ব্যয় না করে নিজেরা বিভিন্ন নামে ভোগ করে। প্রতি বছর আর্থিক হিসাব ইউজিসিতে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বছরের পর বছর এ হিসাব দেয় না। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অর্জিত সার্টিফিকেটে চ্যান্সেলর নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বাক্ষর করার কথা থাকলেও সম্প্রতি ইউজিসির এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ৯২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে উপাচার্য রয়েছেন মাত্র ৬৯টিতে। আর উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ রয়েছেন যথাক্রমে ২১ ও ৪১টিতে। ইউজিসি সূত্র বলছে, অনিয়ম করতেই শীর্ষ এ পদটি ফাঁকা রাখছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

সর্বশেষ খবর