মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্য বানোয়াট, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর : সেনাসদর

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে বানোয়াট, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে বলে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সেনাসদর। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল আলমগীর কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইতিপূর্বে ‘সময়’ টেলিভিশনের টকশোতে তার প্রদত্ত বক্তব্যে সেনাবাহিনী প্রধান সম্পর্কে ‘অসাবধানতাবশত ভুল তথ্য উল্লেখ’ এবং ‘ভুল শব্দ চয়ন ও শব্দ বিভ্রাট হয়েছিল’ মর্মে উল্লেখ করেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও কিছু তথ্য উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে উল্লিখিত কিছু বিষয়ে সেনা সদরের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে এবং এ বিষয়ে সেনাসদর হতে তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করা হলো। কারণ ডা. জাফরুল্লাহর সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যে পুনরায় কিছু বানোয়াট, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আলোচনাকালে আমি দেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল এম এ আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম।’ ডা. জাফরুল্লাহ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ সম্পর্কে যা যা বলেছেন তা সবই ভুল। ডা. জাফরুল্লাহ শব্দ চয়নে ভুল করে ‘কোর্ট অব ইনকোয়ারি’ এর স্থলে ‘কোর্ট মার্শাল’ বলেছেন। তার এই তথ্যটিও সঠিক নয়। ব্যক্তি আজিজের বিরুদ্ধে কখনো কোর্ট মার্শাল তো হয়ইনি বরং জেনারেল আজিজের সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে তার বিরুদ্ধে কোনো কোর্ট অব ইনকোয়ারিও হয়নি। ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্যটি চরম মিথ্যাচারের শামিল। ইতিপূর্বে সময় টিভিতে ভুল, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার ও দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে পুনরায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ও চতুরতার সঙ্গে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন।

এর আগে ৯ অক্টোবর সময় টেলিভিশনের টকশোতে তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎস হিসেবে সুকৌশলে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার একটি চেষ্টা করেছিলেন যা ছিল দুরভিসন্ধিমূলক। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে কখনো কোনো গ্রেনেড হারানো, চুরি বা বিক্রি হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণার আগের দিন টেলিভিশন লাইভ টকশোতে এ ধরনের অসত্য বক্তব্য প্রদান উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অসত্য বক্তব্যকে সংশোধনের কোনো চেষ্টা করেননি। তার সামগ্রিক বক্তব্যে এটা স্পষ্টত যে তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত সব পদবির সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সেনাবাহিনী প্রধানের ভাবমূর্তি এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। সেনাবাহিনী সদর দফতরের প্রতিবাদে বলা হয়, ডা. জাফরুল্লাহর দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য কেবলমাত্র সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সুনাম ও সামাজিক অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করেনি, বরং তা সেনাবাহিনী প্রধানের পদকে চরমভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। যা প্রকারান্তরে চাকরিরত সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে বিভ্রান্ত করছে এবং তাদের মনোবলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া এরূপ অপপ্রচার সেনাবাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল বাহিনীর সংহতি ও একতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে যা অনাকাঙ্ক্ষিত।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জনগণের আস্থা ও বিশ্বস্ততার কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জাতীয় এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মিডিয়া বা অন্য কোনো মাধ্যমে বক্তব্য প্রদানের পূর্বে তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা বাঞ্ছনীয়। মিথ্যা/ভুল তথ্য পরিবেশন একটি গর্হিত অপরাধ। কেননা ভুল তথ্য একদিকে যেমন দেশ মাতৃকার অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের মনোবলের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে তেমনি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের সুযোগ নিতে পারে। তাই সেনাবাহিনী বিষয়ে সত্যতা যাচাই করে তথ্য পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে জিডির তদন্তে ডিবি : মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সম্প্রতি সময় টিভির এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধানকে নিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মন্তব্যকে ‘অসত্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল’ আখ্যায়িত করে ক্যান্টনমেন্ট থানায় জিডি করেছেন সেনাবাহিনীর ওই কর্মকর্তা। জিডি নম্বর ৪৯৮।  ক্যান্টনমেন্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন হাওলাদার জানান, সেনা সদরে দায়িত্বরত মেজর এম রকিবুল আলম গত শুক্রবার থানায় এসে ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে জিডি করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান জানান, ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে জিডি হয়েছে। আদালত ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (দক্ষিণ) বিষয়টি তদন্ত করছে।

সর্বশেষ খবর