শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের উদ্যোগ

মমতার ‘বাংলা’ রাখার প্রস্তাবে আপত্তি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার যে প্রস্তাব রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দিয়েছেন তাতে আপত্তি তুলল ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আপত্তির কারণ— প্রতিবেশী বাংলাদেশের নামের সঙ্গে সাদৃশ্য থেকে গেলে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিমত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। ‘বাংলা’ নামকরণ আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিভ্রান্তি তৈরি করবে কিনা এটাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। এই নাম পরিবর্তনের ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা তাও বিচার্য বিষয়। এ ছাড়া কোনো শহর বা জেলার নাম পরিবর্তনের তুলনায় রাজ্যের নাম বদল অনেক জটিল প্রক্রিয়া। এর জন্য দেশের সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কেননা, দেশ বিভাজনের পরে ভারতের সংবিধানে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তখন বাংলাদেশের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান’। তৃণমূল কংগ্রেসের যুক্তি হলো, এখন পূর্ব পাকিস্তানের কোনো অস্তিত্ব নেই। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর নাম হয়েছে বাংলাদেশ। যদি পূর্ব পাকিস্তান না-ই থাকে তাহলে পশ্চিমবঙ্গ থাকার অর্থ হয় না। ভারতের রাজ্যের নাম বদল নিয়ে প্রথা হলো— প্রথমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সংসদে অনুমোদন করবে। তারপর দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদনে সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। তারপর অনুমোদন। এক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হলো— পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি শাখা এই নাম বদলের প্রস্তাবে আপত্তি করছে। তাই সংসদে বিজেপি অনুমোদন করবে কিনা সন্দেহ। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি বিজেপির হিন্দুত্ব রাজনীতির পাল্টা হিসেবে বাঙালি সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করতে চাইছেন নির্বাচনে। এর আগে ভারতের উড়িষ্যার নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল। ‘ওড়িশা’ ইউপিএ আমলে তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম আইন সংশোধন করেছিলেন। গত জুন মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠান। একদিকে যেমন তারা মনে করেন, দেশ ভাগ এখন অতীতের বিষয়। ফলে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ উচ্চারণ করে সেই ইতিহাস বারবার স্মরণ করার কোনো অর্থ হয় না। দ্বিতীয়ত, দিল্লিতে জাতীয় স্তরের কোনো বৈঠক হলে ক্রমানুমিক নামের আদ্যাক্ষর অনুযায়ী ইংরেজিতে ‘ওয়েস্টবেঙ্গল’ হওয়ার  দরুন তাদের সুযোগ আসে সব শেষে। এখন যদি বাংলা হয়, তাহলে প্রথমেই সুযোগ পাওয়া যায়। অন্যদিকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলিপ ঘোষ মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গ নাম থাকার যুক্তি রয়েছে, যেহেতু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার ইতিহাসকে অস্বীকার করা যায় না। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা রাজ্যের নাম বদল করে বাংলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই প্রস্তাব পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মতামত দিলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে ভারত সরকার।

সর্বশেষ খবর