শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি

ছাদে হাঁস পালনে নতুন সম্ভাবনা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

ছাদে হাঁস পালনে নতুন সম্ভাবনা

ছাদের ওপরে ছোট চৌবাচ্চা (হাউস) করে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি দুটি কক্ষে ১ হাজারের মতো হাঁস। আলাদা আরেকটি কক্ষে দেওয়া হচ্ছে খাবার। হাঁসগুলো খাবার খেয়ে মাঝেমধ্যেই চৌবাচ্চায় নেমে সাঁতরে নিচ্ছে। প্রতিদিন এ খামার থেকে পাওয়া যায় ৩০০-এর মতো ডিম; যা বাজারে বিক্রি হয় আড়াই হাজার টাকায়। এ ছাড়া এখানে বিক্রি হয় পরিণত বয়সের হাঁস। মাসে এ খামারে আয় প্রায় ১ লাখ টাকা। বটিয়াঘাটার তেঁতুলতলায় ছাদে হাঁস পালন করে সাফল্য পেয়েছেন ইবরাহিম ফয়জুল্লাহ। তার সাফল্য দেখে আশপাশের অনেকেই ছাদে বা উঁচু মাচায় হাঁস পালন শুরু করেছেন। প্রায় দুই বছর আগে খামারের বড় পুকুরে ইবরাহিম ফয়জুল্লাহ ২ হাজার হাঁস পালন শুরু করেন। কিন্তু পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে গেলে রোগবালাইয়ে বেশকিছু হাঁস মারা যায়। প্রথম বছরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তিনি বিকল্প পদ্ধতিতে ছাদে হাঁস পালন শুরু করেন। আর এতেই ব্যবসায়িক সাফল্য মেলে। ছোট ছোট পানির হাউস করে দেওয়ায় হাঁসগুলো এখান থেকেই পানির চাহিদা মেটায়। রোগবালাইও কম। ইবরাহিম ফয়জুল্লাহ রূপসা এলাকায় পোলট্রির খামার করেছিলেন। সেখানে মুরগির বাচ্চা ও ডিম উৎপাদন করতেন। বার্ডফ্লুর সময় অনেক মুরগি মারা গেলে তিনি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। পরে ব্যাংক লোন নিয়ে বটিয়াঘাটায় মুরগির পাশাপাশি হাঁসের খামার গড়ে তোলেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল খামারি।

তার খামারে কয়েকজন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি বলেন, এখন কৃষিজমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি জলাশয়-পুকুর অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। ফলে ছাদে হাঁস পালন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। খামারের আয়ের টাকায় তিনি কিছু জমি কিনেছেন। গড়ে তুলছেন বিশাল খামারবাড়ি। শহরের অনেক মানুষ আগ্রহ নিয়েই তার খামারবাড়ি দেখতে আসেন। নিজের জমিতে তিনি আরও বড় পরিসরে গড়ে তুলতে চান হাঁসের খামার। বটিয়াঘাটা উপজেলার কয়েকটি গ্রামে দেখা গেল ধান ও মাছের পাশাপাশি আয়ের বিকল্প খাত হচ্ছে হাঁস। গ্রামের যুবক থেকে শুরু করে অনেক গৃহিণীও যুক্ত হয়েছেন হাঁস পালনে। এখন গ্রামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পালন হচ্ছে ডিংডিং জাতের হাঁস। খুলনা পোলট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব এস এম সোহরাব হোসেন জানান, ছাদে হাঁস পালন খুলনা অঞ্চলে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। পোলট্রি খামারে মুরগির পাশাপাশি হাঁস পালন গ্রামের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিয়েছে। তবে ভালোমানের বাচ্চা পাওয়া এখনো অনিশ্চিত। সহজশর্তে ব্যাংক ঋণ ও রোগপ্রতিরোধ সম্ভব হলে খামারিরা লাভবান হতে পারবেন। খুলনার অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. অরুণকান্তি মণ্ডল বলেন, সচেতন হলে সব ঝুঁকিই কমবেশি এড়ানো সম্ভব। খুলনায় প্রাণিসম্পদ বিভাগ হাঁসের রোগবালাই প্রতিরোধে কাজ করছে। ছাদে হাঁস পালনের নতুন এ পদ্ধতি সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে ভ্যালু চেইনসংশ্লিষ্ট বাজারব্যবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই খাত হিসেবে একে গড়ে তুলতে পারলে খামারিরা লাভবান হবেন।

সর্বশেষ খবর