রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তিন চুক্তি হচ্ছে ভারতের সঙ্গে

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার, যাত্রী ও পর্যটকবাহী ক্রুজ চলাচল, নতুন নৌবন্দর পোর্ট অব কল ঘোষণা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

তিন চুক্তি হচ্ছে ভারতের সঙ্গে

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম এবং  মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়াসহ ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় নৌ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এই চুক্তি তিনটি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে— ট্রানজিট সুবিধায় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পরিবহন চুক্তি, দুই দেশের মধ্যে যাত্রী ও পর্যটকবাহী ক্রুজ চলাচল সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চুক্তি এবং নৌপথে পণ্য চলাচল সুবিধার জন্য প্রচলিত প্রটোকল অ্যান্ড ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি) সংশোধন করে দুই দেশের একাধিক বন্দরকে নতুন ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা সংক্রান্ত চুক্তি।

দুই দেশের নৌ সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। আগামী ২৪ থেকে ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদ। চুক্তির বিষয় নিশ্চিত করে নৌ পরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আগেই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) হয়েছিল। সেটিই এখন পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতে পরিণত হবে। তিনি বলেন, বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তিটি ৫ বছরের জন্য সম্পাদিত হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও ৫ বছর বলবৎ থাকবে। তবে ৬ মাসের নোটিসে যে কোনো পক্ষ এটি বাতিল করতে পারবে। জরুরি প্রয়োজনে বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে যে কোনো পক্ষ চুক্তির বাস্তবায়ন সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারবে বলেও জানান তিনি। 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয় দুই দেশের মধ্যে। এর পর গত সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিপরিষদ সভায় ভারতকে দেশের এই দুই বন্দর ব্যবহার করা সংক্রান্ত চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা জানান, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে আগরতলা ভায়া আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে ডাউকি ভায়া তামাবিল (সিলেট), চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে সুতারকান্দি ভায়া শেওলা (সিলেট) এবং চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে বিবিরবাজার ভায়া শ্রীমন্তপুর (কুমিল্লা) রুটে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবে ভারত। পণ্য সামগ্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশের যান ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মাবলি (গ্যাট) এবং দেশের নিয়ম মেনে চলতে হবে, শুল্ক বিভাগ পরিবাহিত পণ্যের মূল্য অনুযায়ী সমপরিমাণ অর্থে বন্ড গ্রহণ করবে। যেহেতু আন্তর্জাতিক নীতি গ্যাট অনুযায়ী ট্রানজিটের পণ্য পরিবহনের বিপরীতে কোনো ধরনের শুল্ক করারোপের বিধান নেই, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশও ভারতের পণ্য পরিবহনের ওপর কোনো শুল্কারোপ করতে পারেব না। তবে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মালামাল পরিবহনের জন্য শুল্ক/কর ব্যতীত চার্জ-ফি ও পরিবহন খরচ আদায় করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্থলবন্দর ব্যবহার করায় স্থলবন্দরের দক্ষতা বাড়াতেও মাশুল আদায় করা হবে।

দ্বিতীয় চুক্তিটি হবে দুই দেশের নৌপথে যাত্রী ও পর্যটকবাহী ক্রুজ (জাহাজ) চলাচল কার্যকর করার লক্ষ্যে এসওপি চূড়ান্ত করার বিষয়ে। দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল চুক্তি রয়েছে। এরপর গত বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে যাত্রী ও পর্যটকবাহী ক্রুজ চলাচল সংক্রান্ত এমওইউ স্বাক্ষর হয়। এখন সেই জাহাজ চলাচল কার্যকর করার লক্ষ্যে কর্মপরিচালন পদ্ধতি (এসওপি) স্বাক্ষর হবে। কর্মকর্তারা জানান, ভারতের ভিরুগড় ও গুয়াহাটি হয়ে আসামের ধুবড়িতে এসে যাত্রীবাহী জাহাজের প্রবেশাধিকার না থাকায় মালবাহী জাহাজ হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ সময় বিদেশি পর্যটকদের জাহাজ থেকে নেমে যেতে হয়। বাংলাদেশ ভ্রমণে আগ্রহী এ পর্যটকরা অন্য যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে থাকেন। এ সময় জাহাজগুলো ধুবড়ি হয়ে বাংলাদেশের চিলমারী দিয়ে প্রবেশ করে গাইবান্ধা (বাহাদুরাবাদ), সিরাজগঞ্জ, আরিচা, মাওয়া, চাঁদপুর, বরিশাল,  মোংলা, আংটিহারা হয়ে রায়মঙ্গল নদী দিয়ে ভারতের শমসেরনগর যায়। ওই সীমান্ত থেকে পর্যটকরা পুনরায় জাহাজে আরোহণ করে কলকাতা হয়ে গঙ্গা নদী দিয়ে মুর্শিদাবাদ যান। এ ছাড়া ভারতের চেন্নাইয়ে অবস্থিত একটি ট্যুর অপারেটর আমেরিকাভিত্তিক ট্যুর পরিচালনা করে থাকে, যাতে মার্কিনি ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটক থাকেন। বছরে চার থেকে পাঁচবার সুবিধাজনক সময়ে চেন্নাই থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ হয়ে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড হয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে ট্যুরটি শেষ হয়। এ অবস্থায় যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচলের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হলে নদীমাতৃক বাংলাদেশের অপার সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ পাবে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটক। এর ফলে পর্যটন খাত থেকে  বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

তৃতীয় চুক্তিটি হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে প্রচলিত নৌ ট্রানজিট প্রটোকল পিআইডব্লিউটিটি সংশোধন করে একাধিক নদীবন্দরকে ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা। নৌ সচিব জানান, আসামের ধুবড়িকে নতুন ‘পোর্ট অব কল’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। অন্যদিকে আমাদের দিক থেকে পানগাঁও, বাঘাবাড়ী অথবা নগরবাড়ী এই তিনটির যে কোনো একটিকে নতুন ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণার প্রস্তাব থাকবে। আলোচনায় যেটি চূড়ান্ত হবে সেটিকে সংশোধিত প্রটোকলে ‘পোর্ট অব কল’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণার পর ওই নৌবন্দরটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর