রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোটের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়

সংসদ নির্বাচনে ডিজিটাল ডিসপ্লে নিষিদ্ধ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে চিন্তা নেই ইসির

গোলাম রাব্বানী

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় ডিজিটাল ডিসপ্লে বা ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভোট প্রভাবমুক্ত রাখতে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অপসারণের বিধান আসছে সংসদ  নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায়। তবে এর আগে আচরণবিধিতে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে বিধান রাখার কথা বলা হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ নিয়ে আর ভাবছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ আচরণবিধির সংশোধনী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে ইসির।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, আচরণ বিধিমালায় মোট চারটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব থাকছে। এর মধ্যে রয়েছে— ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনী সভার অনুমতি প্রদান এবং পুলিশ সাড়া না দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদন হওয়ার বিধান; নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড ব্যবহার নিষিদ্ধ; নির্বাচনী প্রচারে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার না করা এবং নির্বাচন-পূর্ব সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার দলের কোনো লোক না রাখার জন্য আচরণবিধিতে প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আজ বৈঠকে অনুমোদন দিলে তা আগামী সংসদ নির্বাচনে কার্যকর হবে।

এ বিষয়ে ইসির আইন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বুধবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আচরণবিধিতে কিছু বিষয়ে সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনের প্রচারে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার না করা, ডিজিটাল ডিসপ্লে ব্যবহার না করার বিষয় রয়েছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের মতো কিছু নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ইসির আইন সংস্কার কমিটির সদস্যরা বলছেন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সভাপতি বা সদস্য হিসেবে বহাল থাকলে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকে। তাই এবারে এই বিধান রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে, যাতে কমিটির লোক ভোটে প্রভাব ফেলতে না পারে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, আজ কমিশনের ৩৭তম সভা বেলা ৩টায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ সভায় তিনটি এজেন্ডা রাখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (প্রার্থিতার পক্ষে সমর্থন যাচাই) বিধিমালা সংশোধন এবং বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা। সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় মোট চারটি সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, বিদ্যমান বিধিমালার ৬(১)(খ) ও ১৪(৪) ধারায় সংশোধনী আনা হচ্ছে। আর নতুন সংযোজন করা হচ্ছে ৭(৫ক) ও ৯ক ধারা। এর মধ্যে ৭(৫ক) ও ৯ক উপধারা দুটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আচরণ বিধিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬(১)(খ) ধারায় বলা হচ্ছে—সভার দিন, সময় ও স্থান সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ করবে; এ ক্ষেত্রে লিখিত আবেদন প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। আর যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনুমতি না পাওয়া যায়, তবে ২৪ ঘণ্টা পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমতি প্রদান বলে গণ্য হবে।  

১৪(৪) ধারায় সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে— ‘কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কমিটির কোনো সদস্য/নেতা/কর্মী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে পূর্বে সভাপতি বা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত বা মনোনীত হইয়া থাকিলে বা তৎকর্তৃক কোনো মনোনয়ন প্রদত্ত হইয়া থাকিলে নির্বাচনপূর্ব সময়ে তিনি বা তৎকর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি উক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে থাকিতে পারিবেন না।’

আর ৭(৫ক) ধারা প্রস্তাবে বলা হচ্ছে— নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ইলেকট্রনিক বোর্ড ব্যবহার করা যাবে না। ৯ক-তে বলা হচ্ছে—নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না।

সর্বশেষ খবর