রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সভা পণ্ড

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির নির্ধারিত জনসভা পণ্ড হয়েছে। গতকাল এই জনসভা হেমনগর ডিগ্রি কলেজ মাঠে হওয়ার কথা ছিল। ‘জনসভা হবে’ এ বার্তা দিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই চলছিল মাইকিং। সড়কগুলোতে তৈরি করা হয়েছিল তোরণ। স্থানীয় এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল এ জনসভার আয়োজন করেন। প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছিল নৌকার মঞ্চ। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ করেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য তিনজনের সমর্থকদের তীব্র ক্ষোভের মুখে জনসভার ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হলেন আয়োজকরা। রোমেলের প্রতিপক্ষের লোকরা তার বিরুদ্ধে শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপালপুর পৌর শহরে জুতা মিছিল করে। এ ছাড়া তারা গোপালপুর ও ভূঞাপুরে নির্মিত তোরণ ও বিলবোর্ড ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

জানা যায়, গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নামে ১৩ অক্টোবর উপজেলার হেমনগর কলেজ মাঠে এক নির্বাচনী জনসভা আহ্বান করা হয়। এতে প্রধান অতিথি করা হয় ডা. দীপু মনিকে। কিন্তু রোমেলকে ওই জনসভায় দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে দুই উপজেলায়ই। তখন থেকেই ক্ষোভ বাঁধতে থাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী তানভীর হাসান ছোট মনির, ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠাণ্ডু ও খন্দকার আশরাফউজ্জামান স্মৃতির লোকজনের মধ্যে। পরে ওই তারিখ পরিবর্তন করে ১৬ অক্টোবর এবং পরবর্তীতে ১৯ অক্টোবর শুক্রবার নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দুর্গাপূজার দশমীর কারণে আবারও পিছিয়ে ওই জনসভা পরের দিন শনিবার বিকাল ৩টায় হবে প্রচার করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগ কোন্দল নিরসন করতে অপারগতা প্রকাশ করায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মতি ছাড়াই খন্দকার আসাদুজ্জামানের একক সিদ্ধান্তে জনসভা শনিবার হবে মর্মে ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে দলের অপর তিন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাদের অনুসারী নেতা-কর্মীরা শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপালপুর পৌর শহরে জুতা মিছিল করে। এ ছাড়াও গোপালপুর ও ভূঞাপুরে তোরণ ও বিলবোর্ড ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পোড়ানো হয় এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামান ও তার ছেলে রোমেলের কুশপুত্তলিকা। মঞ্চ পাহারায় মোতায়েন করা হয় পুলিশ। সন্ধ্যার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে থাকে। দেখা দেয় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা। অবস্থা বেগতিক দেখে মধ্যরাতে সিদ্ধান্ত হয় দীপু মনির জনসভা হবে না।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও গোপালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠাণ্ডু বলেন, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে খন্দকার আসাদুজ্জামান এমপি নিজের ছেলে মশিউজ্জামান রোমেলকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য কৌশলে এ জনসভার আয়োজন করেছিলেন। জনগণ এ ষড়যন্ত্র মেনে নেবে না। তাই এ জনসভাকে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রত্যাখ্যান করেছে।

অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনি বলেন, এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামান জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে নিজের অযোগ্য পুত্রকে দলের প্রার্থী হিসেবে কৌশলে ঘোষণা দেওয়ার জন্য একজন কেন্দ্রীয় নেত্রীকে ভুল বুঝিয়ে শনিবার জনসভার আয়োজন করে। জনগণ এ ষড়যন্ত্রমূলক জনসভা প্রত্যাখ্যান করেছে।  

গোপালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হালিমুজ্জামান তালুকদার জানান, স্থানীয় এমপি এ জনসভা চাপিয়ে দিয়েছেন। তাই দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। সন্ধ্যায় তারা এমপি ও তার ছেলের বিরুদ্ধে জুতা মিছিল করেছে।

এ ব্যাপারে গোপালপুর থানার ওসি হাসান আল মামুন বলেন, জনসভার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু আয়োজকরা স্বেচ্ছায় তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। পরে সকালে তারাই মঞ্চের জিনিসপত্র খুলে নেন। তবে এখনো বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা  হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের সেলফোনে বারবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর