‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’প্রাপ্ত ও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনকারী ইতালির খ্রিস্ট ধর্মযাজক ফাদার মারিনো রিগনের লাশ আজ ইতালি থেকে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান রাখাসহ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিবেদিত ফাদার মারিনো গত বছর ২০ অক্টোবর ইতালিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার শেষ ইচ্ছানুসারে তার দেহাবশেষ বাংলাদেশের মাটিতে সমাধিস্থ করা হবে। তারই স্থাপিত বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার শেলাবুনিয়া চার্চের পাশে সমাধি স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও করেছে সরকার। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফাদার মারিনো ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইতালির ভেনিসের অদূরে ভিন্নাভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একজন খ্রিস্ট ধর্মযাজক হিসেবে তিনি ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে অবশেষে তিনি মোংলার শেলাবুনিয়া গ্রামে একটি চার্চ ও একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই গ্রামেই তার স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছিল তার অকুণ্ঠ সমর্থন। যুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নিজের প্রতিষ্ঠিত চার্চে গোপনে একটি ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন। তার এ ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সুস্থ হয়ে পুনরায় রণাঙ্গনে ফিরে গেছেন। তাদের মধ্যে বিখ্যাত হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমও ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ফাদার মারিনো রিগনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০৯ সালে নাগরিকত্ব ও ২০১২ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করে।
বাংলাদেশে বসবাসের পর থেকে তিনি বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন এবং বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার কৌতূহল ও নিবিড় ভালোবাসার জন্ম হয়। তিনি রবীন্দ্রনাথের রচনাবলি, লালনের সংগীত ও দর্শনের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। তার মাধ্যমে ইতালিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলিসহ প্রায় ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, জসীমউদ্দীনের নকশিকাঁথার মাঠ ও অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ, লালনের গানসহ অসংখ্য সাহিত্য। বাংলাদেশের এই অকৃত্রিম বন্ধুর শেষ ইচ্ছা পূরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সব মুক্তিযোদ্ধার ত্যাগের মহিমাকে সমুজ্জ্বল রাখার আরও একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
