সড়ক, রেল ও বিমানপথে মাদক আসছে। পরিবর্তন হয়েছে মাদকের রুট। মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরালো অভিযানে কক্সবাজারের রুট পরিবর্তন হয়ে দেশের বিভিন্ন সীমানা দিয়ে মাদক প্রবেশ করছে। পরিবর্তন আনা হয়েছে মাদকের বাহকেও। আগে শিশু ও নারীদের ব্যবহার করা হলেও এখন বাসচালক, অ্যাম্বুলেন্সচালক, কুরিয়ার সার্ভিস, ডিনার সেটের কার্টনসহ বিভিন্ন পন্থায় আনা হচ্ছে মাদক। চারদিনের ব্যবধানে দুই বাসচালককে ৫০ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও মে মাস থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে পুলিশ-র্যাব।
ঘটনা-১ : শনিবার সকালে রাজধানীর মালিবাগের সাফেনা উইমেন্স ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল-সংলগ্ন নবাবী খানাপিনা রেস্তোরাঁর সামনে থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আনিছুল হক দুলাল নামে এক বাসচালককে গ্রেফতার করেন র্যাব-২-এর সদস্যরা। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে সোহাগ পরিবহনের স্ক্যানিয়া গাড়ির চালক হিসেবে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যাতায়াত করেন তিনি। অভিজাত গাড়ির চালক হিসেবে তিনি খুব সহজেই ইয়াবা পাচার করতেন। জিজ্ঞাসাবাদে আনিছুল হক জানান, প্রতি চালান গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পেতেন। ২০ হাজার ইয়াবার চালানটি নির্দিষ্ট চক্রের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে তাকে ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। রাতারাতি ধনী হওয়ার নেশায় তিনি এই ইয়াবা চক্রে জড়িয়ে পড়েন। তিনি কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজধানী ঢাকায় পৌঁছে দিতেন।
ঘটনা-২ : মঙ্গলবার দুপুরে যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকা থেকে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ কক্সবাজার থেকে আসা লন্ডন এক্সপ্রেস বাসের চালক আবদুল হামিদ ও তার সহযোগী রেজওয়ানকে গ্রেফতার করেন র্যাব-১০-এর সদস্যরা। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল হামিদ জানান, কক্সবাজার থেকে আসা প্রতিটি বাসেই কমবেশি মাদকের চালান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়ে থাকে। ঘটনা-৩ : মঙ্গলবার সকালে গাবতলী ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে কাগজপত্র চেক করার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স থামানো হয়। কাগজপত্র দেখাতে বললে চালক রাশেদের কথাবার্তায় সন্দেহ হয়। গাড়িতে কী আছে দেখতে গেলে রাশেদ দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে অ্যাম্বুলেন্সের ভিতর তিনটি বস্তা থেকে ৬৬৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেন ডিএমপির ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের সদস্যরা।ঘটনা-৪ : ৬ অক্টোবর রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজার কাঠপট্টি এলাকা থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ী আবদুল মালেককে গ্রেফতার করেন র্যাব-২-এর সদস্যরা। এ সময় তার কাছে থাকা ডিনার সেটের কার্টনের ভিতর লুকানো অবস্থায় ৯ হাজার ৮৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। তিনি কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, টেকনাফ সীমান্ত থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করতেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ৪ মে থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে ৯ হাজার ৪৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৮৩ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকার। ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে র্যাব এখন কঠোর অবস্থানে। পুলিশ সদর দফতরের এআইডি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্সে। অভিযান চলছে। এটি একটি চলমান ও সমন্বিত প্রক্রিয়া। মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। নিয়মিত মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা আপডেট করা হচ্ছে। হানা দিয়ে তছনছ করা হচ্ছে তাদের আস্তানা। সবার সহযোগিতায় মাদক নির্মূল করা হবে। মাদকের সঙ্গে জড়িত কেউ রক্ষা পাবে না।’