সোমবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বহুরূপী মানুষ

মির্জা মেহেদী তমাল

বহুরূপী মানুষ

কোমড়ে পিস্তলের কাভার ও হ্যান্ডকাফ। হাতে ওয়াকিটকি। সঙ্গে এক সহযোগী নিয়ে চলছে চেকপোস্ট। বিভিন্ন অভিযোগে অনেককে আটকও করছে। পরে থানায় নিয়ে যাওয়ার নাম করে গাড়িতে বিভিন্ন এলাকা ঘুরিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, সে পুলিশ নাকি প্রতারক। সাবিয়া সানি ওরফে তানিয়া। কখনো ডাক্তার, কখনো আবার নায়িকা পরিচয়ে তিনি ঘুরে বেড়ান রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায়। আর এসবের ফাঁকে টার্গেট করতেন টাকা-পয়সাওয়ালাদের। তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ার মাধ্যমে বাসায় প্রবেশের সুযোগ নিতেন। আর বাসায় প্রবেশ করতে পারলেই কেল্লাফতে। ওই বাসা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতেন। এমন করতে করতেই ধরা পড়েছেন সাবিয়া সানি ওরফে সাবিয়া ওরফে তানিয়া। অবশেষে উত্তরা থেকে তেজগাঁও থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। এমন প্রতারক ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাজধানীসহ সারা দেশেই। কখনো ধরা পড়ছে, আবার কখনো পড়ছে না। এদের খপ্পরে পড়ে সাধারণ মানুষ দিশাহারা। পুলিশ বলছে, একটু সচেতন হলেই মানুষকে এমন হয়রানির শিকার হতে হয় না। আর হয়রানির শিকার হলেও পুলিশকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে বলে মনে করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। মাসুদ রানা ওরফে বিশাল (৪৮) ওয়াকিটকি পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন সহযোগী নিয়ে। ইয়াবা নেশার জন্য টাকা জোগাড় করতে বিভিন্ন সময় ডিবি, পুলিশ বা ট্রাফিক সার্জেন্ট সেজে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। কিন্তু তার সেই মুখোশ এবার উন্মোচিত হয় পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর। বেশ কিছুদিন চেষ্টার পর তাকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট পদ থেকে অবসরে যান বিশাল। পরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে চাকরি নেন। পরিবার সংসার নিয়ে খুবই ভালো চলছিল। কিন্তু ইয়াবায় আসক্ত হয়ে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন অপরাধে। শুরু হয় মানুষের সঙ্গে একের পর এক প্রতারণা।’ ‘শ্যামলী থেকে ভোরে আটক করা হলেও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। ভুয়া পুলিশের পরিচয়ধারী মাসুদ রানা বিভিন্ন সময় মানুষকে আটক করত এবং টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দিত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।’ আটকের সময় তার কাছে একটা ওয়াকিটকি সেট, হ্যান্ডকাফ পিস্তলের কভার ও ছুরি উদ্ধার করা হয়। সে বিভিন্ন সময় তার সহযোগীদের নিয়ে রাস্তায় পুলিশ সেজে চেকপোস্ট বসানোর নাম করে পথচারীদের হয়রানি করত। যার কাছে যা পেত তাই নিয়ে মানুষকে ছেড়ে দিত। যদি কোনো সময় কারও কাছে কিছু না পাওয়া গেলে তাকে ধরে গাড়িতে তুলে ঘুরাতে থাকে এবং আত্মীয়স্বজনদের ফোন দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা এনে তারপর ছেড়ে দিত। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে সে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে হয়রানি করে আসছিল বলে জানা গেছে। এদিকে বিভিন্ন পরিচয়ে ঘুরে বেড়ানো সাবিয়া সানি ওরফে সাবিয়া ওরফে তানিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। তেজগাঁও থানা পুলিশ জানায়, প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ ও চুরির অপরাধে তাকে রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার নামে রাজধানীর বেশ কয়েকটি থানায় চুরি ও প্রতারণার মামলা রয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। তেজগাঁও থানা পুলিশ জানিয়েছে— তানিয়া প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সখ্য গড়ে তুলতে নিজেকে কখনো ডাক্তার, আবার কখনো নায়িকা হিসেবে পরিচয় দিতেন। দীর্ঘদিন পরিচয়ের সূত্রে বিশ্বস্ততা অর্জনের পর প্রবাসী ও ব্যবসায়ীদের বাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। পরে বাসায় গিয়ে কৌশলে টাকাসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতেন। গত ২৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে তেজগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে এমন ঘটনায় একটি অভিযোগ করা হয়। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ১৯ অক্টোবর ভোর ৬টায় উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রতারণা ও চুরির অভিযোগে তানিয়ার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানা ছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানায় মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তেজগাঁও থানা পুলিশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর