মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মায়ের সামনে ছেলে, ছেলের সামনে মায়ের মৃত্যু

বেপরোয়া বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেপরোয়া দুটি বাসের চাপায় পড়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় যখন কাতরাচ্ছিলেন সেলিম মিয়া, রাজপথে তখন বুক চাপড়াচ্ছিলেন তার মা মনোয়ারা বেগম। এক সময় মায়ের চোখের সামনেই ছটফট করতে করতে প্রাণ হারান সেলিম। ছেলের এমন করুণ মৃত্যু তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না মায়ের। এ ঘটনায় জুয়েল নামে আরও একজন পথচারী হাসপাতালে প্রাণ হারান। গতকাল দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ছেলের সামনেই বেপরোয়া বাসের চাকায় পিষ্ট হলেন মা মোর্সেদা বেগম (৫০)। প্রাণপ্রিয় মায়ের রক্তাক্ত নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে আহাজারি করা ছাড়া আর যেন কিছুই করার ছিল না হতভাগ্য সন্তানের। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ৮ বছরের শিশু তাসফিয়া। দিনের প্রথম ঘটনাটি ঘটে দুপুর একটায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে। রাস্তা পারাপারের সময় দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে নিহত হন সেলিম মিয়া (২২) এবং জুয়েল (৩০)। সেলিমের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার আলেপুর গ্রামে। তার বাবার নাম ফজল হক। ডেমরা এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন সেলিম। নিহত জুয়েলের বাসা দয়াগঞ্জে। দুই ছেলে এক মেয়ের জনক জুয়েল ছিলেন তুরাগ পরিবহনের বাস চালক। সেলিমের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি হার্টের রোগী। চিকিৎসা করানোর জন্য সেলিম আজ আমারে ঢাকায় আনছে। কিন্তু দুই বাস পোলারে চাপা দিয়া মাইরা ফালাইছে। চোখের সামনে পোলাটা ছটফট করতে করতে মারা গেল। কিছু করতে পারি নাই।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, একই ঘটনায় জুয়েল নামে আরও একজন মারাত্মক আহত হয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকাল ৫টায় তিনি মারা যান। দুর্ঘটনার পর ‘ট্রান্স সিলভা’ পরিবহনের দুটি বাস জব্দ করেছে পুলিশ। শাহীন গাজী (৩২) নামে এক চালককে আটক করলেও পালিয়েছে অপর বাসের চালক। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই একই এলাকার সাদ্দাম মার্কেটের কাছে বাসের ধাক্কায় ছেলের সামনে প্রাণ হারান মোর্সেদা বেগম (৫০)। আহত হয় ভাতিজি তাসফিয়া (৮)। গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মাকে নিয়ে ১৫/১৬ দিন আগে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থেকে বড় ভাই মহিউদ্দিনের বাড়ি সাদ্দাম মার্কেট বেড়াতে আসি। গতকাল (সোমবার) আমরা কুমিল্লায় ফিরছিলাম। আমার সঙ্গে মা ছাড়াও বড় ভাইয়ের স্ত্রী ফাতেমা, দুই ভাতিজি তাসফিয়া (৮), মুসাফিকা (৪) ছিল। সন্ধ্যায় বাসের অপেক্ষায় সাদ্দাম মার্কেট মেইন রোডে আসি। সেখান দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি যাত্রীবাহী বাস ধাক্কা দেয়। এতে মা এবং ভাতিজি তাসফিয়া পড়ে যায়। মায়ের দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিল। পরে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর ভাতিজি তাসফিয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন।’

সর্বশেষ খবর