মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে চায় রাশিয়া

মস্কোয় দুই পক্ষের বৈঠক শুরু

রুহুল আমিন রাসেল

বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত পণ্যবাজার সুবিধা দিতে উদ্যোগী হয়েছে রাশিয়া। এ বিষয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে গতকাল মস্কোয় ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কমিশন অন ট্রেড, ইকোনমিক, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের আলোচনা বৈঠক শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপনকান্তি ঘোষ স্বাক্ষরিত এক কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছিল, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বিভিন্ন এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনার জন্য প্রস্তাব পাঠালে রাশিয়া সরকার সম্ভাব্য আলোচনার সারসংক্ষেপ আকারে খসড়া প্রটোকল পাঠায়। খসড়ায় বাণিজ্য সহায়তা ও উন্নয়ন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিটি বিভাগসমূহ অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয় প্রতিফলিত হয়। আপাতত বিস্তারিত পণ্য তালিকা প্রস্তুত না করে রাশিয়ায় বাংলাদেশের যেসব প্রধান প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে না সেগুলোর অন্তর্ভুক্তির জন্য রাশিয়ান ফেডারেশনকে অনুরোধ করা যেতে পারে। শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। সূত্র জানায়, পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিতে আগ্রহী বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যে দেখা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশ হয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রাশিয়ায় রপ্তানি  হচ্ছে। এতে বাড়ছে দীর্ঘসূত্রতা। আবার বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন। দুই দেশের ব্যাংকসমূহের মধ্যে সরাসরি লেনদেন চালু না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন এ সংকট সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশের সরকার। ওয়াকিবহাল সূত্রমতে, রাশিয়ায় দ্রুত বাড়ছে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য। দেশটিতে প্রধান সাতটি রপ্তানি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। রাশিয়াকে কেন্দ্র করে এর আশপাশের দেশগুলোয়ও বাংলাদেশি পোশাক পণ্যের রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যাংকিং সমস্যার কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলে রাশিয়ায় যে পরিমাণ বাংলাদেশি পণ্য যাচ্ছে, তার অধিকাংশই সরাসরি রপ্তানি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত, তুরস্ক, ইরান ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে বাংলাদেশি পণ্য রাশিয়ায় যাচ্ছে। এতে প্রত্যাশিত রপ্তানি বাণিজ্য আমাদের আশার চেয়ে কম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই বাস্তবতায় এখন পুরনো বন্ধুত্বকে পুঁজি করে বাণিজ্য বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশন। দুই দেশ বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহায়তা বাড়ানোর লক্ষ্যে গতকাল থেকে রাশিয়ার মস্কোয় ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কমিশন অন ট্রেড, ইকোনমিক, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের প্রথম সভায় মিলিত হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে ২০ সদস্যবিশিষ্ট সরকারি প্রতিনিধি দল মস্কো সফর করছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযমের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ব্যবসায়ী নেতা ছাড়াও আছেন বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, কৃষি, আইসিটি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা। প্রতিনিধি দলের সদস্য ‘কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেস্টস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ বা সিআইএস-বিসিসিআই সভাপতি হাবীব উল্লাহ ডন এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাশিয়ায় আমাদের রপ্তানি বাজার অনেক ভালো। আছে বিশাল সম্ভাবনাও। আশার কথা হলো, রাশিয়া এখন বাংলাদেশি পণ্য তালিকা দেখে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়া যায় কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। এমন প্রেক্ষাপটে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উন্নয়ন ও সহযোগিতা বাড়ানো, ব্যাংকিং লেনদেন, তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা, সামুদ্রিক মাছ আহরণ ও বিনিয়োগ সুবিধার বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক নিয়ে আলোচনা হবে।’ ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। রাশিয়ায়ও এ সুবিধা চাই। রাশিয়ার সরকার ৪৮টি পণ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। কিন্তু এর আওতায় বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ও সিরামিকস পড়ে না। আমরা চাই রাশিয়া বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধার পণ্যের তালিকা আরও বড় করুক।’ এদিকে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্যানুযায়ী, তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য রাশিয়াই হয়ে উঠতে পারে ভালো বাজার। রাশিয়া ও আশপাশের দেশগুলোয় বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা ক্রমে বাড়ছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের বাজার হিসেবে পরিচিত আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। কিন্তু রাশিয়াকেও এখন নতুন বাজার হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কারণ রাশিয়া ও আশপাশের দেশগুলোয় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার সৃষ্টি হয়েছে খুব সহজেই। বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন বুর্যোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ার বাজারে যে প্রধান আটটি পণ্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে পোশাক খাতের ওভেন ও নিট, পাটজাত পণ্য ও কাঁচা পাট, কৃষিপণ্য, হিমায়িত মাছ, কেমিক্যাল পণ্য, টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, অ্যালুমিনিয়াম। অন্যদিকে বাংলাদেশের আমদানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে সার, কেমিক্যাল, সয়াবিন, মেটাল ও স্টিল, এয়ারক্রাফট, গাড়ি, রেলের যন্ত্রাংশ, অস্ত্র, তুলা, মেশিনারিজ, ইলেকট্রনিক্স ও পানীয় জাতীয় পণ্য।

সর্বশেষ খবর