মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি

চট্টগ্রামে বৈঠক থেকে বের হতেই গ্রেফতার বিএনপির দুই নেতা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

নাটকীয়তা শেষে সিলেটে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সমাবেশের মাত্র দুই দিন আগে পাওয়া এই অনুমতির পর সিলেটে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টভুক্ত অন্য দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সমাবেশকে ঘিরে নেওয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগমের মাধ্যমে সরকারের কাছে বার্তা দিতে চায় ঐক্যফ্রন্ট।

সম্প্রতি বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও জেএসডি মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর প্রথম কর্মসূচি হিসেবে সিলেটে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে ২৩ অক্টোবর, পরে ২৪ অক্টোবর সমাবেশের তারিখ নির্ধারণ করে। প্রথমে পুলিশ অনুমতি না দিলেও রবিবার আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের ইঙ্গিত পেয়ে নানা শর্ত দিয়ে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। এর পর থেকেই তৎপর হয়ে ওঠেন ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলের সিলেটের নেতারা। বিশেষ করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। সমাবেশ ঘিরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতারা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বসে নেই অন্য ছোট দলগুলোও। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নিজেদের আরও সংগঠিত করার চেষ্টা তাদের। সমাবেশ উপলক্ষে রবিবার রাতে সিলেটে প্রথম প্রস্তুতি সভা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকা দলগুলোর সিলেটের নেতারা। গতকাল দুপুরে মহানগর বিএনপির কার্যকরী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরসহ শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া প্রস্তুতি সভা করেছে গণফোরামও। এ ছাড়া মাইকিংয়ের মাধ্যমে সিলেটজুড়ে সমাবেশের প্রচারণাও শুরু হয়েছে। বিতরণ করা হচ্ছে লিফলেটও। এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, ‘আমরা শেষমুহূর্তে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছি। কিন্তু বিশাল সমাবেশ করার সব প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। আমরা দফায় দফায় সভায় বসছি। মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। পুণ্যভূমি থেকে ঐক্যফ্রন্টের যে যাত্রা শুরু হচ্ছে, তা শুভ ও সফল হবে।’ বিএনপির নেতারা বলছেন, সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচন ঘিরে বিএনপি ও অন্য সমমনা দলগুলোর যে দাবি, তা বাস্তবায়নের জোরালো আওয়াজ উঠবে। একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনও বেগবান হবে। সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকি বলেন, ‘এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের দিকেই যাত্রা শুরু করছি। আমাদের মূল লক্ষ্য খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।’ সমাবেশের বিষয়ে সিলেট জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্যসচিব তৌফিক পাশা বলেন, ‘সমাবেশকে কেন্দ্র করে আমরা নেতা-কর্মীদের একত্রিত করার চেষ্টা করছি। আমরা সভাও করেছি। সর্বস্তরের নেতা-কর্মী যাতে সমাবেশে উপস্থিত থাকে, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’ সিলেট মহানগর গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনসার খান বলেন, ‘আমরা ঘরোয়া বৈঠক করছি। তবে পুলিশের বাধার কারণে বড় ধরনের কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমরা নেতা-কর্মীদের মানুষের ঘরে ঘরে যেতে নির্দেশ দিয়েছি।’ প্রসঙ্গত, আগামীকাল সিলেটে এসে সকালে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে যাবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। এরপর বেলা ২টায় সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন তারা।

ফ্রন্টের বৈঠক থেকে বের হতেই গ্রেফতার হলেন বিএনপির শামীম-বক্কর : চট্টগ্রামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক বৈঠক থেকে বের হওয়ার পর গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবের রহমান শামীম ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। গতকাল বেলা ১টার দিকে নগরীর জিইসি মোড় এলাকা থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মেহেদি হাসান জানান, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শামীম ও বক্করকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, দুপুরে নগরীর কাজীর দেউড়ি নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশের এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুকে গাড়িতে ওঠিয়ে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী নগরীর জিইসি এলাকায় যান। এ সময় নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল শামীম ও বক্করকে গ্রেফতার করে। বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, গত রবিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় চট্টগ্রামের একটি আদালত। এ সময় আদালত চত্বরে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ তোলা হয়। সে অনুযায়ী কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইদ্রিস বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে প্রধান আসামি করে ১৫০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

সর্বশেষ খবর