বুধবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
একনেকে ২১ প্রকল্প অনুমোদন

কারাগারে কোর্টরুম রাখার অনুশাসন প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

মামলা পরিচালনার জন্য দেশের প্রতিটি জেলখানায় কোর্টরুম স্থাপনের অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ অনুশাসন দেন। সভায় ৬২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার পুনর্নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি জেলখানায় একটি করে কোর্টরুম রাখতে হবে। সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ফিজিক্যালি সমস্যা থাকলে যাতে এখানে মামলা পরিচালনা করা যায় সেজন্য এ অনুশাসন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জেলখানা শাস্তির স্থান না করে পুনর্বাসনের স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এখানে তাঁতে বুননসহ নানা ধরনের উৎপাদনমুখী কাজ করা হবে। এখান থেকে যে আয় হবে কয়েদিদের তার ভাগ দেওয়া হবে। প্রতিটি জেলখানায় একটি টেলিফোন বুথ থাকবে যাতে কয়েদিরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। এদিকে ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণসহ একনেকে গতকাল ২১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২১টি (নতুন ও সংশোধিত) প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৭৭৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি থেকে ১৭ হাজার ৩১৬ কোটি ৯৩ লাখ, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২৩৩ কোটি ৯৩ লাখ ও বৈদেশিক প্রকল্প সাহায্য থেকে ২ হাজার ২২৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয় হবে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। একনেক বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, শিল্প ও বাণিজ্য গতিশীল করতে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ‘ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প : সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ’ নামের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিমসটেক করিডর, সার্ক করিডরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ হবে। ভবিষ্যতে উপ-আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য মহাসড়কের উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, দেশের দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছে সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক। এজন্য স্থাপন করা হচ্ছে সৌর বেইজড স্টেশন।

ফলে দুর্গম অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত ২৫ লাখ মানুষকে টেলিযোগাযোগ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে টেলিটকের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ লক্ষ্যেই ‘সৌর বেইজড স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিটক নেটওয়ার্ক কভারেজ শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এর বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪০৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১২৫ কোটি ২৪ লাখ, ভারতীয় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (থার্ড এলওসি) থেকে ২৫৫ কোটি ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা টেলিটক, বাংলাদেশ লিমিটেডের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০৪ সালে ২ হাজার কোটি টাকা মূলধন নিয়ে গঠিত হয়। ২০০৫ সালের ৩১ মার্চ টেলিযোগাযোগ সুবিধা সম্প্রসারণে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। একনেকে ‘কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার পুনর্নির্মাণ’, ‘৩৫টি ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ’, ‘দ্বিতীয় নগর অঞ্চল উন্নয়ন’, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসনসহ নর্দমা ও ফুটপাথ উন্নয়ন’ ও ‘বরিশাল শহরের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজিত নগর উন্নয়ন প্রোগ্রাম’ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ‘সৌর বেইজড স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিটক নেটওয়ার্ক কভারেজ শক্তিশালীকরণ’, ‘কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়কের যথাযথ মান, প্রশস্ততা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ’, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’, ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের সাতটি আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’, ‘সিপিজিসিবিএল-সুমিতোমো ১২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম’, ‘পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংযোগসড়ক ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ’ প্রকল্পও অনুমোদন করা হয়েছে।

‘এস্টাবলিশমেন্ট অব থ্রি হ্যাল্ডলুম সার্ভিস সেন্টারস ইন ডিফারেন্ট লুম ইনটেনসিভ এরিয়া’, ‘বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নরসিংদীর আধুনিকায়ন ও অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ’, ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’, ‘গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষণ’, ‘চাঁঁদপুর সেচ প্রকল্পের চরবাগাদী পাম্প হাউস ও হাজিমারা রেগুলেটর পুনর্বাসন’, ‘রংপুর বিভাগ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন’ ও ‘মহিষ উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এ ছাড়া ‘কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কার্যক্রম জরুরি সহায়তা এবং ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্পও একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে।

সর্বশেষ খবর