শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কাঁচাবাজারে চুরি ঠেকাতে আসছে ওজন বন্ধু

আরাফাত মুন্না

সারা দেশে কাঁচাবাজারে ওজনে কারচুপি ঠেকাতে নতুন সেবা নিয়ে আসছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ‘ওজন বন্ধু’ নামে নতুন এ সেবার মাধ্যমে প্রতিটি কাঁচাবাজারের নির্দিষ্ট স্থানে বসানো হবে ডিজিটাল ওয়েট স্কেল (ওজন মাপার যন্ত্র)। এর মাধ্যমে ওজনে প্রতারণা ঠেকানো, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। পণ্য কেনার পর ক্রেতা নিজেই ওজন বন্ধুর মাধ্যমে ওজন যাচাই করে নিতে পারবেন। ওজনে কম পেলে স্কেলের পাশে বসানো অভিযোগ বক্সেই জানাতে পারবেন অভিযোগ। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর জানায়, আগামী ডিসেম্বরেই প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ১০টি বাজারে এ সেবা শুরু করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হবে ওজন বন্ধু। অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখনো বিশেষ করে কাঁচাবাজারে মুরগি ও মাছের দোকানগুলোয় ওজনে কম দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, এসব ভোগ্যপণ্য ওজন মাপার পর বিক্রেতা নিজেই তা জবাই করে কেটেকুটে পরিষ্কার করে দেন। ফলে ওজনে কম দেওয়ার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাচাই করার সুযোগ থাকে না ক্রেতাদের। গরু-খাসির গোশত, ফল, তরিতরকারির দোকানেও ওজনে কম দিতে দেখা যায়। এসব বিষয় বিবেচনা করেই ‘ওজন বন্ধু’ সেবা চালু করার কথা মাথায় নিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সেবাটি চালু হলে এসব প্রতারণা ঠেকানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভোক্তারা কাঁচাবাজারে গিয়ে নানাভাবে প্রতারিত হন এমন অনেক অভিযোগই আমাদের কাছে আসে। বিশেষ করে ওজনে কম দেওয়া হামেশাই হচ্ছে। তবে ওই সব পণ্য মোড়কজাত না হওয়ায় আমাদের কিছুই করার থাকে না। তাই ভোক্তারা যাতে সঠিক ওজনে পণ্য কিনতে পারেন সেই চিন্তা মাথায় রেখেই অধিদফতর “ওজন বন্ধু” নামে এ সেবাটি নিয়ে আসছে।’ তিনি বলেন, ‘এ সেবার আওতায় আমরা প্রতিটি কাঁচাবাজারে নির্দিষ্ট স্থানে একটি করে ডিজিটাল ওয়েট স্কেল (ওজন মাপার মেশিন) বসাব। ওই মেশিনের পাশেই থাকবে একটি অভিযোগ বাক্স। ফলে কোনো ক্রেতার পণ্য কেনার পর সংশয় হলে তিনি নিজেই পণ্যের ওজন মেপে নিতে পারবেন।’ তিনি বলেন, এখানে দুটি লাভ রয়েছে। পণ্যের ওজন কম পেলে ক্রেতা সঙ্গে সঙ্গে বিক্রেতার কাছে গিয়ে জানাতে পারবেন। আবার অভিযোগ বাক্সে অভিযোগও দিতে পারবেন। বাজার কমিটিই ভোক্তা অধিদফতরের ওজন মাপার মেশিন ও অভিযোগের দিকে খেয়াল রাখবে। শাহরিয়ার বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা সেবাটি প্রাথমিকভাবে শুরু করতে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১০টি বাজারে সেবাটি যাত্রা করতে পারে। ওইসব বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমাদের কাথা চলছে। মোটামুটি সবাই আমাদের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন।’ ভোক্তা অধিদফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথম এক মাস নতুন এ সেবা নিয়ে বিশেষ প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে। অধিদফতরের বসানো ওজন মেশিনের আশপাশে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা লিফলেট বিলি করবেন। ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে এ সেবা সম্পর্কে ক্রেতা-বিক্রেতাদের অবহিত করা হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার চালানো হবে সেবাটি সম্পর্কে।’ এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুুল ইসলাম লস্কর বলেন, ‘আমরা ওজন বন্ধুর বিষয়ে কাজটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা প্রাথমিক ১০টি বাজার দিয়ে শুরু করব। তবে বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি সিদ্ধান্ত হয়নি। বাজার আরও বাড়তেও পারে। এটি করলে ভোক্তাদের প্রতারিত হওয়ার হার অনেকটাই কমে আসবে।’ মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের লোকবলের সংকট আছে। তাই এ পদ্ধতির দেখভাল বাজার কমিটিই করবে। তবে ব্যবসায়ীরা অহেতুক হয়রানি যেন না হন তাও লক্ষণীয় থাকবে।’

সর্বশেষ খবর