সোমবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দৃষ্টি বেসরকারি বিনিয়োগ-শিল্পায়নে

‘ডেসটিনেশন বাংলাদেশ’ ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রতিদিন ডেস্ক

দৃষ্টি বেসরকারি বিনিয়োগ-শিল্পায়নে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডেসটিনেশন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানি আয় বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি নতুন রপ্তানি বাজার খোঁজার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, আমরা শিল্পর বহুমুখীকরণ করতে চাই। একই সঙ্গে আমরা বিশ্বের চাহিদার দিকেও খেয়াল রাখতে চাই। কোন দেশে কী চাহিদা আছে, আর বাংলাদেশ কী জোগান দিতে পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। সূত্র : বাসস ও বিডিনিউজ।

গতকাল ডিসিসিআইয়ের ৬০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডেস্টিনেশন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আমি চাই আপনারা এসব মাথায় রেখেই ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু কৃষির ওপর নির্ভর না করে দেশে যাতে শিল্পায়ন হয়, সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিয়েছি। খাদ্যের জোগানে কৃষির প্রয়োজন রয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারও কাজ করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ, বেসরকারি খাতই পারে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে, উন্নত করতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আগামীতে তার দল পুনর্নির্বাচিত না হলে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, আর নির্বাচনও ঘনিয়ে এসেছে। আমি জানি না অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলে কী হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পার্লামেন্টারি ফর্ম অব ডেমোক্রেসিতে আছি। আগামীতে বাংলাদেশের মানুষ যদি ভোট দেয়, তাহলে আমরা আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে সক্ষম হব। আর যদি না দেয় তাহলেও আমাদের সব সময় একটা প্রচেষ্টা থাকবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। তারপর কী হবে, আমি বলতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। তখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যখন আবার সাত/আট বছর পর সরকার গঠন করলাম তখন দেখলাম, সবকিছু পিছিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধীরে ধীরে আমরা সবকিছু একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসি এবং দেশ যাতে এগোতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দিই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আজ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা বাংলাদেশের প্রশংসা করে যাচ্ছে, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। শেখ হাসিনা বলেন, প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস বলছে, বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াকে অতিক্রম করে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সহযোগিতা দরকার। শেখ হাসিনা বলেন, আমি ব্যবসা বুঝি না। আমার কাজ ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া, সম্ভাবনাগুলোকে জাগিয়ে দেওয়া। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যাতে হয়, সেদিকেও আমরা মনোযোগী। ব্যবসা-বাণিজ্য গ্রামপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। গ্রামের তৃণমূল মানুষ যেন আর্থিকভাবে সক্ষম হয়। শুধু নিজের দেশ নয়, আঞ্চলিক-উপআঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টিও মাথায় রেখেছি আমরা। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এবং এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খান স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে ‘ভিশনারি লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে আর কোনো সংঘাত নয় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে (সিএইচটি) ভূমি বিরোধ নিরসনে ভূমি কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বিকালে রাজধানীর বেইলি রোডে ‘শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম হিল ট্রাক্টস্ কমপ্লেক্স’-এর উদ্বোধনকালে বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে আর কোনো অশান্তি ও সংঘাত চাই না। আমরা চাই ওই অঞ্চলের লোকেরা ভালো থাকুক এবং সেখানে শান্তি বজায় থাকুক। শেখ হাসিনা বলেন, শান্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশ সমৃদ্ধি অর্জন করবে। তিনি আরও বলেন, শান্তির পথেই অগ্রগতি অর্জিত হয়।

সর্বশেষ খবর