বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল উদ্বোধন

আরেকবার সুযোগ পেলে দেশকে লক্ষ্যে নেব : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আরেকবার সুযোগ পেলে দেশকে লক্ষ্যে নেব : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন —বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেটে তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। আবার যদি ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে প্রত্যেক বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দেব এবং দেশকে লক্ষ্যে নিয়ে যাব।

তিনি গতকাল সকালে রাজধানীর মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে শেখ রাসেল গ্যাস্টোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভবন উদ্বোধন এবং আরও কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কাজেই আমরা আশা করব আপনারা চিকিৎসাসেবাকে আপনাদের কেবল পেশা হিসেবে নয়, মহান দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করবেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং ইনশা আল্লাহ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের অংশবিশেষ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালিকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না এবং তাদের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনিও খেলতে পারবে না।’ অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের উদ্বোধন এবং বিএমআরসি ভবনের সম্প্রসারণ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের সম্প্রসারণ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সম্প্রসারণ, কিডনি ডিজিজেজ অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের সম্প্রসারণ, মুগদা হাসপাতালের সার্ভিস ব্লকের সম্প্রসারণ, নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াফারি ভবন, অ্যাজমা সেন্টারের সম্প্রসারণ কাজ এবং কনস্ট্রাকশন অব হেলথ ম্যানেজমেন্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি বলেন, আমি একটা অনুরোধ করব, এই ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতাল— যে প্রতিষ্ঠানই আমরা তৈরি করি না কেন, সেই প্রতিষ্ঠান যেন সুন্দরভাবে চলে, ভালোভাবে চলে। এখানে মানুষ যাতে সেবা পায়। মানুষকে সেবা দেওয়াটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কাজ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, যুগোপযোগী করা এবং সুন্দরভাবে যেন এগুলো পরিচালিত হয়, সেটুকু আপনাদের কাছে আমি চাই। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম শিশির এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সিরাজুল ইসলাম খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সরকারের স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, মানুষের সেবার মহান ব্রত নিয়ে আপনাদের এই পেশা। এ ব্রত নিয়েই আন্তরিকভাবে মানুষের সেবা করুন। প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে এখন চিকিৎসাসেবা দেওয়া থেকে শুরু করে গবেষণা, ক্লাস নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। দেশের মানুষের রোগের ধরন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, রোগ নির্ণয় এবং এর সমাধানে কাজ করতে হবে। শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট, ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, বেগম ফজিলাতুন নেছা কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালসহ তার সরকারের বিভিন্ন বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের তিন মেয়াদে বিশেষায়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে  তোলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে রোগীরা স্বল্পমূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা নিতে পারছেন এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি মানুষের সাংবিধানিক অধিকার এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সংবিধানে এ অধিকার লিপিবদ্ধ করেছেন। এ জন্য সরকার স্বাস্থ্য খাতের দিকে বেশি নজর দিয়েছে এবং দেশের মানুষ যেন সুস্বাস্ব্যের অধিকারী হয় সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। জলবায়ু, পরিবেশগত কারণসহ নানা কারণে দেশের মানুষ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়। এ জন্য একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছিল। এ লক্ষ্যে শেখ রাসেল গ্যাস্টোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভবন স্থাপন করা হলো। এমন একটি প্রতিষ্ঠান করতে পেরে আমি আনন্দিত। তিনি হাসপাতালটির নাম ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তক ঘটনায় শহীদ বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে ১০ বছরের শেখ রাসেলের নামে নামকরণ করায় সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে আমরা যেমন দেশের উন্নয়ন করেছি, তেমনি বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের মানমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি ’৭৫ পরবর্তী প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বলেন, আগে বিদেশিরা কোনো বাঙালিকে দেখলে বলত খুনি। এখন আর তা বলে না। বাংলাদেশের হারানো গৌরব আমরা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। বিদেশি অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান তাকে প্রশ্ন করে জানতে চান— কীভাবে বাংলাদেশের এত উন্নয়ন হয়েছে, ম্যাজিকটা কী? উত্তরে তার একটাই কথা, ম্যাজিক কিছুই না, সবটাই হচ্ছে আন্তরিকতা এবং কর্মনিষ্ঠা। মানুষের জন্য কিছু করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা।

সর্বশেষ খবর